অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি ১০ অগাস্ট


বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন। (ছবি- ইউএনবি)
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন। (ছবি- ইউএনবি)

বাংলাদেশের সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১০ অগাস্ট দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানির দিন ধার্যের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গত বছর গত ৮ অগাস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা এই রিভিউ আবেদন নিয়ে শুনানি করেন। তিনি মামলাটি আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।

এরপর বেশ কয়েকবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। বৃহস্পতিবারও কার্যতালিকায় ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ ১০ অগাস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন মাহবুবে আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রায়ে যেসব অপ্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা এসেছে, তা বাতিল চাওয়া হয়েছে আবেদনে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণসংক্রান্ত আইন হওয়ার আগেই আপিল বিভাগের রায়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। এটিসহ মোট ৯৪টি যুক্তি তুলে ধরে রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়। যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত।

সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবীর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই শুনানি শেষে তা খারিজ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।

ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেওয়া হয়।

সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

আপিল বিভাগের রায়ে দেওয়া কিছু পর্যবেক্ষণ তখন দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ওই রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। একটি পক্ষ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাবও পাস হয়।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউর জন্য সহকর্মীদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি করেন তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর কেটে গেছে সাড়ে ৫ বছরেরও বেশি সময়।

XS
SM
MD
LG