বুধবার সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার মুসলিম পূণ্যার্থী হজ যাত্রার অংশ হিসেবে শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুঁড়ে মারার প্রতীকী রীতিতে অংশগ্রহণ করেন।
সকালের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) চেয়েও বেশি তাপমাত্রার মধ্যে বিপুল পরিমাণ পূণ্যার্থী হেঁটে অথবা বাসে করে পবিত্র শহর মক্কার ঠিক বাইরে অবস্থিত সুবিশাল জামারাত কমপ্লেক্স পরিদর্শন করতে যান। সেখানে পায়ে চলার সেতু পেরিয়ে তারা শয়তানের প্রতীকী রূপ হিসেবে উপস্থাপিত ৩টি বড় আকারের পিলারের কাছে পৌঁছান।
পূণ্যার্থীরা আগের দিন রাতে মুজদালিফা নামে পরিচিত জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নুড়ি পাথর পিলারের দিকে ছুঁড়ে মারেন। এটা হচ্ছে নবী হজরত ইব্রাহীম (আঃ) [খ্রিস্ট ও ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের কাছে আবরাহাম নামে পরিচিত] এর নেওয়া পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি—তিনি প্রলোভনকে জয় করতে শয়তানের দিকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন ।
১৯৯০ ও ২০০০ এর দশকে পাথর ছুঁড়তে এসে পূণ্যার্থীরা বেশ কয়েকবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। সে সময় শত শত মানুষ পদদলিত হয়ে মারা যান। সৌদি কর্তৃপক্ষ তারপর থেকে বেশ কিছু বড় আকারের পায়ে চলার সেতু নির্মাণ ও পুরো এলাকাটির নকশা সংস্কার করে একে সার্বিকভাবে পূণ্যার্থীদের জন্য আরও নিরাপদ করেছে।
তবে এ বছর পূণ্যার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হতে পারে উত্তাপ।
মঙ্গলবার আরাফাত ময়দানে সারাদিন নামাজ পড়ে কাটানোর সময় পূণ্যার্থীরা ৪৫ ডিগ্রির সেলসিয়াসের (১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) চেয়েও বেশি তাপমাত্রার সম্মুখীন হন। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটিতে তেমন ছায়ার সংস্পর্শ পাননি পূণ্যার্থীরা।
পূণ্যার্থীরা ছাতার নিচে ভিড় করেছেন এবং হাতে-মুখে পানি ছিটিয়ে আরাম পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মোবাইলফোনগুলো এতোটাই উষ্ণ হয়ে পড়েছিল যে সেগুলো ধরে রাখা যাচ্ছিল না এবং কয়েক মিনিট ব্যবহারের পরেই সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
সৌদি কর্তৃপক্ষ হজ উপলক্ষে হাজারো স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে, যারা পূণ্যার্থীদের মধ্যে পানির বোতল বিতরণ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার দিনের শেষে বলেছে, তারা অতিরিক্ত গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া ২৮৭ জন পূণ্যার্থীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
হজ ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভের অন্যতম এবং সকল শারীরিক ও আর্থিক ভাবে সক্ষম মুসলিমের জন্য তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার এতে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক। পূণ্যার্থীদের জন্য এটি একটি অদ্বিতীয় ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, যার মাধ্যমে সব পাপ মুছে যায় বলে মনে করা হয়, সারা বিশ্ব থেকে আগত মুসলিমদের সঙ্গে দেখা হয় এবং সৃষ্টিকর্তার আরো কাছাকাছি পৌঁছানো যায়।