ভারতের এক সাবেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ২০ জুন ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন যে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু এলাকায় ১৪ বছর পর বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের জঙ্গীবাদের পুনরুত্থান ঘটেছে।
২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ছয়টি প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। ঐ ঘটনায় ১০ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৩জন প্রাণ হারিয়েছেন। ১৯৯০ সালে প্রথম জঙ্গিবাদের ঢেউ শুরু হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ডের প্রাক্তন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ দীপেন্দ্র সিং হুদা বলেন,জঙ্গিবাদ পুনরুত্থানের দুটি কারণ হচ্ছে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারত সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে জঙ্গিরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং চীনের সাথে সীমান্ত সমস্যা মোকাবেলায় জম্মু থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়া।
হুদা বলেন, “লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা মোকাবেলায় সেনা মোতায়েনের ফলে জম্মুর কিছু এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে গিয়েছে ।” তিনি বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি কমে যাওয়ায় সন্ত্রাসীদের এই অঞ্চলে তাদের তৎপরতা চালানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ।”
২০ এপ্রিল জঙ্গিরা ভিম্বার গলি এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আক্রমণ চালালে পাঁচ সেনা নিহত হন এবং একজন গুরুতরভাবে আহত হন।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখার ২২৫ কিলোমিটার যা লাইন অফ কন্ট্রোল নামে পরিচিত অংশে রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলার ঘন জঙ্গলে জঙ্গিরা পালিয়ে যায় ।
ঐ হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী ওস্থানীয় পুলিশের একটি যৌথ দলজঙ্গিদের খুঁজে বের করতে জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এর দুই সপ্তাহ পরে ২০২৩ সালের ৫ মে, জঙ্গিরা সেনা দলের উপর আক্রমণ করে এবং পাঁচ জনকমান্ডো হতাহত হয়।
পুঞ্চ জেলার তোট্টা গলির বাসিন্দা ৬৫বছর বয়সী মুন্সি খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, জঙ্গিবাদের প্রাথমিক পর্যায় শেষ হবার পর ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলটি স্থিতিশিল ছিল।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে রাজৌরি ওপুঞ্চ জেলার ভাট্টা ডুরিয়ান জঙ্গলে জঙ্গিরা ভারতীয় বাহিনীর ওপর দুটি প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ১১অক্টোবরের হামলায় পাঁচ জন এবং ১৫ অক্টোবরের আক্রমণে আরও চারজন সৈন্য নিহত হয়।
সরকারি বাহিনী হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ি অঞ্চলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েও জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সনাক্ত করতে পারেনি। তবে ২০২২ সালের ১১ আগস্টে জঙ্গিরা রাজৌরির একটি সেনা শিবিরে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে পাঁচ সেনাকে হত্যা করে এবং দুই জঙ্গি নিহত হয়।
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানে স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, “প্রথম পর্যায়ে জঙ্গিদের প্রায়ই রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত কিন্তু বর্তমানে তারা লুকিয়ে রয়েছে কারণ স্থানীয়রা এখনও তাদের দেখতে পাচ্ছে না।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের পুঞ্চ-রাজৌরি রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল হাসিব মুঘল বা জম্মুতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেবেন্দ্র আনন্দ কেউই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জম্মু অঞ্চলে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের কথা স্বীকার করে বলেন, ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় জঙ্গিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম।