কসোভোর প্রধানমন্ত্রী দেশটির সার্ব-অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে অস্থিরতা কমানোর লক্ষ্যে মঙ্গলবার একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, নতুন স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন ও বিশেষ পুলিশ বাহিনীর আকার কমানোর উদ্যোগ। অঞ্চলটির স্বাধীনতার পক্ষে থাকা পশ্চিমা মিত্রদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি।
গতমাসে স্থানীয় নির্বাচনের পর, আলবেনীয় জাতিগোষ্ঠীর মেয়রগণ দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, সেখানে সংঘর্ষ হলে, অন্তত ৩০ জন শান্তিরক্ষী এবং ৫২ জন সার্বীয় নাগরিক আহত হন। সার্বীয় নাগরিকরা নির্বাচন বর্জন করে; এবং সেই নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সার্বীয় জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ।
মেয়রদের প্রত্যাহার করতে ও তাদেরকে এই পদে বসানোর জন্য ব্যবহৃত বিশেষ পুলিশবাহিনীকে সরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তির প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা, ঐ অঞ্চলে স্বায়ত্বশাসিত সার্ব মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৩ সালের চুক্তির প্রতি সমর্থন জানায়।
কুর্তি বলেন, “সহিংস (সার্ব) গোষ্ঠীগুলোকে কসোভোর ভূখণ্ড থেকে সরানো হয়েছে; (এবং এ কারণে) পৌরসভার ৩টি ভবনে কসোভো পুলিশের উপস্থিতি কমানো হবে।”
কুইন্ট গ্রুপ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কুর্তি বলেন, “কসোভো প্রজাতন্ত্রের সরকার সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে উত্তরাঞ্চলের ৪টি পৌরসভায় আগাম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেবে।”
তিনি জানান, এ বিষয়ে তার পরিকল্পনা তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপন করেছেন এবং ব্রাসেলসে সার্বিয়া ও কসোভোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে অবস্থিত।
কুর্তি, সার্বীয় অধ্যুষিত এলাকায় পৌরসভাগুলোর একটি সমিতি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কিছু বলেননি। এ ধরনের উদ্যোগে, সার্বীয় জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের বৃহত্তর পরিসরের স্বায়ত্ত শাসন নিশ্চিত হতো। তবে বরাবরই তিনি এ চুক্তি বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। তার আশংকা, এ ধরনের উদ্যোগ, এই অঞ্চলকে আবার সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে।
নতুন নির্বাচন আয়োজনের আগে, সার্বীয়দের জন্য অধিকতর স্বায়ত্ত শাসন নিশ্চিত করাতে, গত সপ্তাহে কসোভোর প্রতি অনুরোধ জানান সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচ।
কসোভো ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশের ঘোষণা দেয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এর আগে, প্রায় এক দশক ধরে দেশটির ৯০ শতাংশ আলবেনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, সার্বীয় শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। নেটো বোমাবর্ষণ করে সার্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীকে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। তবে, বেলগ্রেড এখনো কসোভোকে তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।