মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী শাসিত একটি আদালত দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৩৪ বছর বয়সী এক সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করেছে। গত ডিসেম্বরে সামরিক বিরোধী বিক্ষোভের ভিডিও ধারণের দায়ে তাকে দেওয়া তিন বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড যোগ করা হয়েছে বলে তার আইনজীবী ও পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন।
অনলাইন মিয়ানমার প্রেসফটো এজেন্সির ভিডিও সাংবাদিক হুয়ে ইয়াদানার খেত মোহ মোহ তুনকে দোষী সাব্যস্ত করা দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীর সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপ। তারা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর থেকে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের মতে, মিয়ানমার বিশ্বের বৃহত্তম সাংবাদিক কারাগারগুলির মধ্যে একটি। তারা চীনের পরে দ্বিতীয়, এবং নজরদারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের নীচের দিকে রয়েছে । এই বছর ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৭৩ তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার ।
প্যারিসভিত্তিক এই গোষ্ঠীটির এশিয়া-প্যাসিফিক ডেস্কের প্রধান ড্যানিয়েল বাস্টার্ড মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, 'হুমু ইয়াদানারের ওপর অতিরিক্ত ১০ বছরের কারাদণ্ড আরোপের মাধ্যমে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা আবারও মিয়ানমারের ওপর সাংবাদিকদের নিপীড়নের ভীতিকর মাত্রা প্রদর্শন করেছে।“
তিনি মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজকে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আদায়ের জন্য অত্যন্ত প্রতীকী এই মামলাটি গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সাংবাদিকরা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন কারণ সামরিক সরকার অনেক প্রতিবেদনকে অপরাধ বলে গণ্য করেছে এবং ১৫০ জনের ও বেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে। আর এর ফলে অন্যান্য আরও অনেক সাংবাদিক হয় আত্মগোপন করেছেন নয়ত দেশত্যাগ করছেন। কমপক্ষে ১৩টি গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং প্রায় ১৫৬ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ৩১ জনকে ইতোমধ্যে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে। আটক অবস্থায় কমপক্ষে চারজন সাংবাদিক নিহত ও অন্যদের নির্যাতন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হুমু ইয়াদানারের আইনজীবী দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, আসামিপক্ষ প্রমাণ করেছে যে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধকারী গোষ্ঠীর সাথে আর্থিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগ সত্য নয়। তবে বিচারক বলেছেন, প্রমাণটি অসম্পূর্ণ ছিল। আইনজীবিটি জানান, হুমু ইয়াদানার আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।