উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেছেন, তাঁর দেশ প্রথমবারের মতো একটি সামরিক গোয়েন্দা উপগ্রহ তৈরি করেছে এবং তিনি একটি অপ্রকাশিত তারিখে এটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছেন। দেশটির একটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বুধবার (১৯ এপ্রিল) এ কথা জানায়।
আগের ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট পরীক্ষা থেকে বোঝা গেছে, উত্তর কোরিয়া মহাকাশে উপগ্রহ পাঠাতে পারে। গোয়েন্দাগিরি করার জন্য উপগ্রহটিতে অত্যাধুনিক ক্যামেরা রয়েছে কি না এই নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ অতীতের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পরে কেবল নিম্ন রেজুলুশনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার দেশটির মহাকাশ সংস্থা সফরকালে কিম বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার একটি সামরিক উপগ্রহ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, কিম এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার “সবচেয়ে বৈরী পদক্ষেপের” কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা হুমকিকে গুরুতর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক মহড়া এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ দেওয়ার আশা করছেন।
কিম বলেন, “সামরিক নজরদারি ১ নম্বর উপগ্রহ" মধ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের এর উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তর কোরিয়াকে অবশ্যই বেশ কয়েকটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে হবে।
উত্তর কোরিয়া রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার জন্য তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষাসহ তাদের চলমান অস্ত্র পরীক্ষা, যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়া। উত্তর কোরিয়া গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে এ বছর প্রায় ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সম্মিলিত মহড়া আরও সম্প্রসিরত করছে। চলতি সপ্তাহে দেশ দুটি প্রায় ১১০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ১২ দিনের বিমান মহড়া শুরু করে এবং জাপানের সঙ্গে এক দিনের নৌ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা মহড়ার আয়োজন করে।
কিম জং উন বলেন, তাদের গোয়েন্দা উপগ্রহের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, “পরিস্থিতির প্রয়োজনে আগাম সামরিক শক্তি ব্যবহারের” সক্ষমতা অর্জন করা।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণ আঞ্চলিক শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং যেকোনো ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক আরও বলেছে, উত্তর কোরিয়া উসকানি দিলে দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।