জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ সোমবার বলেছেন, সংস্থাটি আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য, শীগগিরই একটি সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। তিনি দেশটির মৌলবাদী কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন।
আমিনা মোহাম্মদ এমন সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যখন আফগানিস্তানের একচ্ছত্র ক্ষমতাবান ও তালিবান প্রধান, হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, ইসলামিক আইন বা শরিয়া ভিত্তিক কঠোর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে "[আফগান] সমাজের ধর্মীয় ও নৈতিক সংস্কার" এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য মঙ্গলবার তার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মোহাম্মদ প্রিন্সটন স্কুল অফ পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের একজন শ্রোতাকে বলেন, আন্তর্জাতিক ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আফগানিস্তানে কর্মরত দূতদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জাতিসংঘের শীর্ষ এই কর্মকর্তা গত জানুয়ারিতে আফগানিস্তান সফর করেন এবং তালিবান নেতাদের সাথে আলোচনা করেন। সংঘাত-বিধ্বস্ত দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে, নারীদের কাজ ও চলাফেরার স্বাধীনতার উপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিয়েছে মৌলবাদী কর্তৃপক্ষ।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যত সারা দেশে ষষ্ঠ গ্রেডের বাইরে কাজ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী এবং মেয়েদের প্রবেশাধিকারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেই সাথে, আফগান নারী কর্মীদের জাতিসংঘ এবং বেসরকারি সাহায্য গোষ্ঠীতে কাজ করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ বলেন, তালিবান প্রশাসন দাবি করে, তারা আফগানিস্তানে দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা রোধ করতে এবং নারীদের আরও উত্তরাধিকারের অধিকার দেওয়ার জন্য বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করেছে।
মোহাম্মদ বলেন, জাতিসংঘ তাদের আফগান নারী কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে। পাশাপাশি তারা তালিবানের সঙ্গে নারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছে। তিনি আরও বলেন, নারী কর্মীরা নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে কাজ করতে এবং বেতন পেতে পারেন।
মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে নারীদের উপর বিধিনিষেধের বিষয়টি উল্লেখ করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালিবান সরকারকে বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক হস্তক্ষেপ এবং কাবুলে তার সাবেক আফগান মিত্র সরকারের কথা উল্লেখ করেছেন, তালিবান প্রধান। আখুন্দজাদা নারীদের উপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সব পক্ষেরই তা সম্মান করা উচিত।
আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক মজুদও আটকে আছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা দেশটিতে অব্যাহত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ আফগান অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে, এবং দেশটির মানবিক অবস্থা আরও ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করছে, ২ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জরুরী সাহায্যের প্রয়োজন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত, ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের এক সমীক্ষায় সতর্ক করা হয়েছে, নারী ও মেয়েদের অধিকার খর্ব করার তালিবানের আদেশ, আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে, সেইসাথে সাহায্য প্রবাহের স্তরকেও প্রভাবিত করতে পারে।