অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

উত্তর আয়ারল্যান্ডে বিভক্ত সরকারের পুনর্মিলনের ব্যাপারে আশাবাদী বাইডেন


উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার পর, অতিথিদের সাথে সেলফি তুলছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১২ এপ্রিল, ২০২৩।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার পর, অতিথিদের সাথে সেলফি তুলছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১২ এপ্রিল, ২০২৩।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার বেলফাস্টে জনগণকে বলেন, তিনি আশা করেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিভক্ত সরকার শীঘ্রই একসাথে মিলেমিশে কাজ করবে।

আলস্টার ইউনিভার্সিটিতে তাঁর এক বক্তৃতায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষকে তিনি বলেন, "আমি আশা করি এটা বলা আমার পক্ষে খুব বেশি অনুমান নির্ভর নয় যে আমি বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি [যেগুলি] গুড ফ্রাইডে চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভবিষ্যতের জন্য নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন। "এটি আপনাদের জন্য একটি রায়, কিন্তু আমার নয়। তবে আমি আশা করছি, এটি শীগগিরই ঘটবে।"

কিন্তু বাস্তবে, উত্তেজনা, অকার্যকর পরিস্থিতিতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের দুটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল, একটি ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি, যারা লন্ডনের সাথে অব্যাহত শাসনের পক্ষে। অপরদিকে, সিন ফেইন, যারা ব্যাপকভাবে আয়ারল্যান্ডের সাথে পুনঃএকত্রীকরণের পক্ষে। এদের মধ্যে সংঘাত চলছে ।

বাইডেন উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে তিন দিনের সফরের প্রথম দিনে গুড ফ্রাইডে চুক্তির ২৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে সম্পাদিত ওই চুক্তির ফলে ক্যাথলিক জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে দ্বীপ দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলা মারাত্মক সাম্প্রদায়িক বিবাদের অবসান ঘটিয়েছিল। একটি দল, যারা প্রতিবেশী আয়ারল্যান্ডের সাথে একত্রিত হতে চেয়েছিল অপরদিকে, বেশিরভাগ প্রোটেস্ট্যান্ট ইউনিয়নবাদী, যারা যুক্তরাজ্যের সাথে থাকতে বদ্ধ পরিকর।

বাইডেন, যিনি প্রায়শই তার আইরিশ শিকড়ের কথা উল্লেখ করেন, তিনি মঙ্গলবার বলেন, তাঁর এই সপ্তাহের এমারল্ড দ্বীপের সফরটি কোনও অবকাশ যাপনের জন্য নয়।

একজন সংবাদদাতার প্রশ্নের জবাবে, তিনি ১৯৯৮ সালের চুক্তির গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন, যা দ্বীপটিতে শান্তি বয়ে এনেছিল।

এই তিন দিনের সফরে বাইডেনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার “আইরিশ চুক্তি এবং উইন্ডসর চুক্তিগুলি বহাল রাখা নিশ্চিত করা”। তিনি বলেন। "শান্তি বজায় রাখুন, এটাই মূল বিষয়।"

হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন, বাইডেন তাঁর এবারের সফরে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে কর্মরত ব্রেক্সিট এবং ইউরোপীয় বিষয়ের গবেষক ডোনাটিয়েন রুয়, জুমের মাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে ভিওএ-কে বলে “গুড ফ্রাইডে চুক্তির পর, আমরা সকলেই ধরে নিয়েছিলাম শান্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সত্যিই, এটি ছিল উচ্চ মাত্রায় প্রচেষ্টা চালানোর মুহূর্ত।

ব্রেক্সিট ভোটের পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং বাইডেন যে উইন্ডসর ফ্রেমওয়ার্কের বর্ণনা করেছেন, তা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ইউকে-পন্থী রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায়নি। দলটি ১৯৯৮ সালের শান্তি চুক্তির পরে গঠিত সূক্ষ্ম ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির হুমকি দিয়ে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারকে বয়কট করে চলেছে।

এবং আয়ারল্যান্ডের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের নেতা ব্যাখ্যা করেছেন, তারা ঠিক কী ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে সেন্ট প্যাট্রিক দিবস উদযাপনের জন্য মার্চ মাসে হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, "আমরা গুড ফ্রাইডে চুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে দেখতে চাই, যাতে করে তারা নতুন প্রজন্মের জন্য আশার সঞ্চার করতে পারে। এছাড়া আমরা উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনগণ এবং তাদের জন্য উপলব্ধ সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক সুযোগগুলি থেকে উপকৃত হতে দেখতে চাই।"

রুয় বলেন, কিন্তু শান্তি একটি প্রক্রিয়া এবং এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে বেশ উত্সাহজনক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

তিনি বলেন, "আমি এখনও ইতিবাচক হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ দেখছি। বিশেষ করে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের অসাম্প্রদায়িক দলগুলির উত্থান এবং ক্রমবর্ধমান সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। তবে হ্যাঁ, আমরা হয়তো আরও ভাল একটা জায়গায় থাকতে পারতাম, কিন্তু আমরা সত্যিই ১৯৯৮ সাল থেকে বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছি।"

বাইডেনের এবারের এই সফরে তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাসও গ্রথিত আছে। বেশিরভাগ আমেরিকান পরিবারের মতো, বাইডেনের পরিবারও অন্য মহাদেশ থেকে এদেশে এসেছেন। ব্যালিনা গ্রামটি থেকেই তাদের আমেরিকান হয়ে ওঠার গল্পের শুরু হয়েছিল।

ব্যালিনা কাউন্সিলের নেতা, মার্ক ডাফি, বার্তা সংস্থা এফপি-কে বলেছেন, এটি এখন পূর্ণ বৃত্তে এসেছে। ব্যালিনার উত্তরপুরুষ , ব্যালিনার এক ছেলে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং ওভাল অফিসে বসে কাজ করছেন।"

শুক্রবার, ব্যালিনার সেই ছেলে ছোট্ট শহরটির বাসিন্দাদের সামনে কথা বলবেন। তবে তার সেই কথা সারা বিশ্বে শোনা যাবে।

XS
SM
MD
LG