ব্রিটেন এবং জাপানের মধ্যে বুধবার স্বাক্ষরিত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির সমালোচনা করেছে চীন। ওই চুক্তির আওতায়, দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে সেনা মোতায়েন করতে পারবে। লন্ডন এবং টোকিও উভয়ই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে একটি "চ্যালেঞ্জ" হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বেইজিংয়ে সংবাদদাতাদের বলেছেন, "এশিয়া-প্যাসিফিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্য একটি গতিশীল অঞ্চল, ভূ-রাজনৈতিক খেলার জন্য কোনও কুস্তির মাঠ নয়। চীন কারো জন্য চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সব দেশের সহযোগিতার অংশীদার।"
ওয়াং আরও বলেন, "প্রাসঙ্গিক দেশগুলির মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিশ্বাস এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হওয়া উচিত। কোনও কাল্পনিক শত্রু তৈরি করা উচিত নয়, কিংবা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সংঘর্ষের সেকেলে মানসিকতারও প্রবর্তন করা উচিত নয়।"
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী ঋষি সুনাক টাওয়ার অফ লন্ডনে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে, দুই নেতাকে জাপানি সামুরাই বর্মের একটি পোশাক দেখানো হয়েছিল, যেটি ১৬১৩ সালে ইংল্যান্ড এবং জাপানের মধ্যে প্রথম বাণিজ্য চুক্তিকে চিহ্নিত করার জন্য জাপানের তৎকালীন সামরিক নেতা শোগুন তোকুগাওয়া ব্রিটেনের রাজা জেমসকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
চুক্তিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে, পারস্পরিক অধিগমন চুক্তি বলা হয়। গত মে মাসে দুই দেশ চুক্তিটির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছিল। ইউরোপের কোনো মিত্রের সঙ্গে জাপান এই প্রথম এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করল। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা চুক্তির অংশ হিসেবে, জাপানে হাজার হাজার আমেরিকান সেনা মোতায়েন রয়েছে।
এক বিবৃতিতে, সুনাকের কার্যালয় বলেছে, "এই ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, আমাদের সময়ের অভূতপূর্ব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য, গণতান্ত্রিক সমাজগুলির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"
দুই দেশ ইতালির পাশাপাশি একটি নতুন ষষ্ঠ-প্রজন্মের ফাইটার জেট তৈরিতে কাজ করতেও সম্মত হয়েছে। ব্রিটিশ সংস্থা বিএই সিস্টেমস ইতোমধ্যে টেম্পেস্ট নামে পরিচিত একটি প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করছে। এটি হবে সবচেয়ে বড় জাপানি-ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কর্মসূচি।
ব্রিটেনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক জোনাথন ইয়াল বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং চীনের সামরিক সম্প্রসারণের মুখে জাপান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে।
ইয়াল ভিওএ-কে বলেছেন, “এটি এখন একটি খোলামেলা ব্যাপার যে, [ব্রিটিশ] বিশেষ বাহিনী জাপানের ভূখণ্ডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাস্তবতা হলো, দুই দেশের সামরিক বাহিনী কয়েক বছর ধরেই এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। জাপানে এটি করা সহজ হবে, কারণ সেখানে আইনি কাঠামো থাকবে।”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ গ্রুপ অব সেভেনের ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকার মিত্রদের সাথে দেখা করতে ওইসব এলাকা সফর করছেন। জাপান বর্তমানে জি-৭ এর সভাপতিত্বের দায়িত্বে রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনার পর, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে, দুই দেশ বলেছে, চীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি "অভূতপূর্ব" হুমকি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে।