অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বুর্কিনা ফাসো-তে নতুন করে রক্তপাতের জন্য স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়ারাই দায়ী, বলছে অধিকার গোষ্ঠীগুলো


বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাডুগু প্রশাসনিক দপ্তরে পিতৃভূমির প্রতিরক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক (ভিডিপি) হিসাবে নাম নথিভুক্ত করার জন্য পুরুষরা তাদের আবেদনপত্রের সাথে লাইনে দাঁড়িয়েছে। ১৬ নভেম্বর, ২০২২। (ফাইল ছবি)
বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাডুগু প্রশাসনিক দপ্তরে পিতৃভূমির প্রতিরক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক (ভিডিপি) হিসাবে নাম নথিভুক্ত করার জন্য পুরুষরা তাদের আবেদনপত্রের সাথে লাইনে দাঁড়িয়েছে। ১৬ নভেম্বর, ২০২২। (ফাইল ছবি)

গত সপ্তাহান্তে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ উত্তর-পশ্চিম বুরকিনা ফাসোতে ২৮টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। জিহাদিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধকে সমর্থন করার জন্য তৈরি একটি স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়াকেই এর জন্য দায়ী করেছে অধিকার কর্মীরা।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশেষ করে মালি ও নাইজার সীমান্তবর্তী উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বেড়েছে।

সোমবার গভীর রাতে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, "সরকারকে ৩০-৩১ ডিসেম্বর রাতে নৌনাতে ঘটা একটি হত্যাকাণ্ডের কথা জানানো হয়েছিল।

ওই হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক রিপোর্টে "২৮ জন নিহত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।" বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু কালেক্টিভ অফ কমিউনিটিজ আগেইন্সট ইম্পিউনিটি এন্ড স্ট্যাগমিটাইজেশন( সিআইএসসি) বা দায়মুক্তি ও কলঙ্কের বিরুদ্ধে সম্প্রদায়ের সমষ্টি নামে একটি অধিকার গোষ্ঠী, ভলান্টিয়ার্স ফর দ্য ডিফেন্স অফ দ্য ফাদারল্যান্ড(ভিডিপি), বা পিতৃভূমির প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নামে একটি বেসামরিক সহায়ক বাহিনীর দিকে আঙুল তুলেছে, যারা জিহাদিদের বিরুদ্ধে ৭ বছরের পুরনো লড়াইয়ে সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে।

নৌনার পাবলিক প্রসিকিউটর আরমেল সামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, "হত্যাকাণ্ডের শিকার অধিকাংশই পুরুষ, যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।"

স্থলবেষ্টিত পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এবং সবচেয়ে অস্থিতিশীল একটি দেশ।

২০১৫ সাল থেকে, দেশটি আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে যুক্ত জিহাদিদের নেতৃত্বে একটি বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে লড়াই করছে। চলমান এই লড়াইয়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত হয় ভিডিপি, যাদেরকে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং তারপর তারা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করে। তাদের কাজ মূলত নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ বা পাহারাদারির দায়িত্ব পালন করা।

সিআইএসসি বলেছে, নৌনাতে সপ্তাহান্তের ঘটনাগুলি একটি স্থানীয় ভিডিপি সদর দফতরে একটি "সন্ত্রাসী হামলা" দিয়ে শুরু হয়েছিল বলে জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র লোকেরা তখন "প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে মারাত্মক হামলা চালায়।" সিআইএসসি-এর মতে, ভুক্তভোগীরা জানান, হামলাকারীরা ভিডিপি, যারা ডোজো নামক ঐতিহ্যবাহী শিকারী সম্প্রদায়ের সদস্য।

সিআইএসসি সেক্রেটারি দাউদা দিয়ালো এই উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতি কর্তৃপক্ষকে "বিশেষ মনোযোগ" দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডায়ালো সতর্ক করে বলেন, "সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি জনসাধারণের মধ্যে নিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্যই এই ধরণের সীমালঙ্ঘনকে কাজে লাগায়।"

সিআইএসসি বলেছে, সপ্তাহান্তে ডোজো বা ভিডিপি’র সাথে জড়িত অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তিনটি ঘটনা ঘটেছে।

সরকারের মুখপাত্র জ্যঁ ইমানুয়েল ওয়েড্রাওগো বলেছেন, সপ্তাহান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি "এমন সময়ে ঘটে, যখন বুর্কিনা ফাসো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি সমন্বিত পদক্ষেপে সমগ্র জনগণকে একত্রিত করার জন্য অভিযান শুরু করেছে।"

নভেম্বরে, কর্তৃপক্ষ দেশপ্রেমিক প্রচারণার দ্বারা সমর্থিত, ৫০,০০০ ভিডিপি নিয়োগের জন্য একটি অভিযান শুরু করে এবং ৯০,০০০ লোক এতে যোগ দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার "যে কোনো কারণেই হোক না কেন, সব ধরনের অপব্যবহার বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধী"।

জিহাদি অভিযানের মুখে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষতির খেসারত দিয়েছে ভিডিপি।

শত শত স্বেচ্ছাসেবক মারা গেছে, বিশেষ করে রাস্তার ধারে লাগানো ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এর অতর্কিত বিস্ফোরণে।

সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ভিডিপির মধ্যে হতাহতের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা গত বছর দুটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। রক্তপাত রোধে ব্যর্থতার জন্য ক্ষুব্ধ অফিসারদের দ্বারা এই অভূত্থান শুরু হয়।

XS
SM
MD
LG