পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, দেশটির প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই এর সাবেক প্রধানকে, পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে বৃহস্পতিবার মনোনীত করেছেন।
কর্মকর্তারা জানান, শরীফের সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের এক সভায়, সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে স্থলাভিষিক্ত করতে, ছয়জন জ্যেষ্ঠ জেনারেলের তালিকা থেকে জেনারেল আসিম মুনিরকে নির্বাচন করা হয়। জেনারেল বাজওয়ার আগামী সপ্তাহে অবসর গ্রহণের কথা রয়েছে।
সভার পর এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করে বলেন, তা ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি’র আবশ্যিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাজধানী ইসলামাবাদের পার্শ্ববর্তী রাওয়ালপিন্ডি শহরের সামরিক সদর দফতরে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে, মুনির ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ সামরিক বাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
নতুন সামরিক প্রধানের মনোনয়নটি এমন সময়ে আসল যখন দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।
বিশেষ করে বাজওয়ার নেতৃত্বকালীন দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এর ফলে সামরিক বাহিনীটি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষজনের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ অভিযোগ করেছেন যে, শরীফ ও বাজওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে এপ্রিল মাসে এক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তার সরকারকে উৎখাত করে। ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা এই সাবেক নেতা, তার করা দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
তবে, সাম্প্রতিককালে খান তার বাজওয়া-বিরোধী বাগাড়ম্বরে কিছুটা নরম সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন যে, জেনারেল বাজওয়া যদি তার অপসারণে কোন ভূমিকা পালন নাও করে থাকেন, তারপরও তিনি খানের সরকারকে রক্ষা করতে পারতেন।
বুধবার, পাকিস্তানের সামরিক সদর দফতরে, নিহত সৈনিকদের পরিবারের প্রতি দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত তার সর্বশেষ ভাষণটিতে, বাজওয়া আনুষ্ঠানিকভাবে খানের অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তবে, বাজওয়া এটা স্বীকার করেন যে, তার প্রতিষ্ঠানটি কয়েকদশক ধরেই জাতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে আসছে, যার ফলে সেটি মাঝেমধ্যে মানুষজনের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
জেনারেল বাজওয়া বলেন, “আমার ধারণা যে, প্রধান কারণটি হল বিগত ৭০ বছর ধরে রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ, যা কিনা অসাংবিধানিক। তাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, অনেক চিন্তাভাবনার পর, সামরিক বাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা ভবিষ্যতে আর কখনোই কোন রাজনৈতিক বিষয়ে কোনভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।”
তবে, সামরিক বাহিনী কেন রাজনীতি থেকে সরে আসছে সে বিষয়ে বাজওয়া কোন ব্যাখ্যা দেননি এবং সমালোচকরা দ্রুতই তার এমন দাবির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।