বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় আমি মনে করি এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল।”
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) গণভবনে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় সফরের ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “এবারের সমাবেশে বাংলাদেশ সকল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এটি বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ, দেশের স্বার্থের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৮ দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার ( ৫ অক্টোবর) ভোরে স্বদেশে ফিরেছেন। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান তিনি। ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ চায়। কোনো রাজনৈতিক দল তাতে যোগ দেবে কি দেবে না, তা সেসব দলের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেটা যে কোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। আমরা তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না...হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই চাই সব দল এতে যোগদান করুক।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ তার মিত্র ও অন্যদের সঙ্গে নিয়ে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সব ধরনের উন্নয়ন ও সংস্কার করেছে। এতে যদি কেউ যোগ না দেয়, আমরা কী করতে পারি?”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ, আমরা চাই সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। ভোটে কারচুপি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে না এবং কখনোই করেওনি (অতীতে)।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসে জনগণের জন্য কাজ করে, তাদের মন জয় করে এবং তাদের ভোট অর্জন করে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে বের হয়নি।”
শেখ হাসিনা জানান, তার দলের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে এবং দলটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, সমস্ত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, “কোভিড মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সরকার অঙ্গিকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী বা অবিলম্বে কোনও বড় ঝুঁকি খুঁজে পাননি।ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হব।”
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংকট সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছেন।