বুধবার ইরানের বেশ কয়েকটি শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ দমন করার প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যেই নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে, দেশব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। যা ইরানের ধর্মগুরুদের কাছে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদকারীরা ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পতনের আহ্বান জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, উরমিয়া, তাবরিজ, রাশত এবং রাজধানী তেহরানের শহরগুলিতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চারপাশে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলি সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।
তেহরানের এক ছাত্র বলেন, "তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে প্রচুর নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অনেক পুলিশ ভ্যান ছাত্রদের গ্রেপ্তারের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে। তাই আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে ভয় পাচ্ছি।"
অধিকার গোষ্ঠীগুলি বলছে, ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাথে সম্পৃক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়া বাসিজসহ নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে হাজার হাজার লোক গ্রেপ্তার এবং শত শত আহত হয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলি মৃতের সংখ্যা ১৫০ এর উপরে বলে জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ, ইরানকে অস্থিতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী প্রতিপক্ষকে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ এনে, নিরাপত্তা বাহিনীর অসংখ্য সদস্যের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলিতে দেখা যায়, তেহরানের হাইস্কুলের মেয়েরা তাদের মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলছে এবং "(সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী) খামেনির মৃত্যু হোক" বলে স্লোগান দিচ্ছে।
"অনুপযুক্ত পোশাক" এর জন্য গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানে আটক অবস্থায় মাহসা আমিনির মারা যাওয়ার পর থেকে ইরান জুড়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।
সরকার আমিনির মৃত্যুর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, এবং খামেনি বলেছেন, আমিনির মৃত্যু তাঁর "হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে"।
সম্প্রতি ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে জরুরি তলব করে। তারা অস্থিরতায় হস্তক্ষেপ বা ভূমিকা পালনের করছে বলে দেশটি অভিযোগ করেছে।
এই সপ্তাহে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমর্থনের দৃশ্য চোখে পড়ে। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে জুলিয়েট বিনোচে এবং ইসাবেল হুপার্টের মতো ফ্রান্সের নেতৃস্থানীয় অভিনেত্রীরা তাদের চুল কেটে ফেলেন। এছাড়া, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সুইডিশ সদস্য বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার চুলের ঝুঁটি ছিঁড়ে ফেলেন।