টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধিনিষেধ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই কমিউনিটির মানুষেরা। ‘সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন’ শিরোনামের সেই নির্দেশনার বিষয়ে ‘আদিবাসী’ সংগঠনের নেতারা ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে জানানো প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, "পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার এমন অধিকার সরকারের নেই।" পাশাপাশি ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটিকে তারা ‘অপমানজনক’ মনে করছেন।
নির্দেশনাটি ১৯ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের টিভি-২ শাখার উপসচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়,
"বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বর্ণিত অবস্থায় আগামী ৯ আগস্ট, ২০২২ তারিখে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্য ব্যক্তিদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে 'আদিবাসী' শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।"
বাংলাদেশ সরকার এধরনের বিধিনিষেধ জারি করলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট তার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে এই জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষদের 'আদিবাসী' বলেই তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। ১৭ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করার সময় মিশেল বাচেলেট বলেন, "নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী মানুষ বিশেষ করে তরুণদের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন।"
সহিংসতা বা জমি দখলের হাত থেকে হিন্দু এবং আদিবাসীদের রক্ষার বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছর আগের শান্তিচুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত অভিযোগ, ভূমি বিরোধ এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমি।"
‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহারে বিধিনিষেধ জারি করার পর কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বিষয়টি নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশিষ্টজন, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্রনেতা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা।
দেবাশীষ রায়
রাজা, চাকমা সার্কেল
আমরা যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি, সমতলে গারো, সাঁওতালসহ প্রভৃতি জাতিসত্তার মানুষের জন্য ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করছি। এটা শুধু শব্দ নয়। এটা আমাদের পরিচয়।
আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ আমল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে Indigenous ছিল, সমতলেও ছিল। এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে যখন আদিবাসী বলা হলো, তখন তো কেউ কোনো সমস্যার কথা বলেনি।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ১৯৭২ সালে Indigenous and Tribal Populations Convention 1957, Convention 107 of 1957 অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেটা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই। তখন কেউ সমস্যা দেখেনি। এখন কেন দেখছে? আশির দশকে জাতিসংঘে লিখিতভাবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে আদিবাসী রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষিতেও এটা বলা হয়েছে। গত কয়েক সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে প্রধানমন্ত্রীরা যে শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন সেখানেও আমাদের আদিবাসী বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
সমস্যা দেখা দিয়েছে ২০১০ সালের পরে। এটা কেন সমস্যা, তারাই জানেন যারা বিরোধিতা করছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে Indigenous একটি জেনেরিক শব্দ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ২০০৭ সালে এটা গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। এখন আপনি নেটিভ আমেরিকান হতে পারেন, নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে মাউরি হতে পারেন বা পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা হতে পারেন…এখানে কোনো পার্থক্য নেই।
জাতিসংঘ একটি ঘোষণাপত্র গ্রহণ করলে দুই-চার-পাঁচ বছরে বদলায় না। এটা আন্তর্জাতিক চুক্তি। আমরা তো জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়ে গেছি। সরকার কী বলল, তাতে কিছু আসে-যায় না।
সরকারের কাছে আমরা একাধিকবার দাবি জানিয়েছি। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের পাঁচজন এমপি’র অনুরোধে আমি একটি কমিটির সভাপতি হয়েছিলাম। কমিটির কাজ ছিলো সংবিধানে আদিবাসীদের জন্য কী কী পরিবর্তন আনা উচিত সেবিষয়ে মতামত দেওয়া। এই দাবিনামাতে আমি যেমন মতামত দিয়েছি, তেমনি বর্তমান সরকারের আদিবাসী নেতৃত্বও দিয়েছে। সেখানে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের অনুরোধেই কমিটিতে আমি সভাপতিত্ব করেছি। আমাদের দাবিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না। কিন্তু দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকার পরে গ্রহণ করেনি।
রানী য়েন্ য়েন্
চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা এবং আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী
আমার কেবল একটাই প্রশ্ন সরকারের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৩ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকার সময় ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী বর্ষ উপলক্ষে আদিবাসীদের যখন ‘আদিবাসী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, তাদের ওপর বঞ্চনা শোষণের কথা উল্লেখ করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন, তখন কেন এবিষয়ে কেউ কথা বলেননি?
ক্ষমতায় আসার পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে আদিবাসীদের আদিবাসী নামে স্বীকৃতি দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয় বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার সরকারের কমিটমেন্টের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে আদিবাসীরা।
অথচ সেই সরকারই মাত্র দুই বছর পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ নামে অভিহিত করেছে। করছে। আদিবাসীদের দাবি উপেক্ষা করে সংবিধানে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বলে পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে সরকার আমাদের আত্ম পরিচিতির অধিকার লঙ্ঘন করেছে। কোনো আইনের মাধ্যমে কোনো জাতির বা জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নির্ধারণ করা সম্ভব না। পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়।
সেই ২০১১ সাল থেকে দেশের আদিবাসীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি চেয়ে আসছে। এর বিপরীতে সরকার খুব সহজ ভাষায় আমাদের পরিচয়ের দাবিকে খারিজ করে বলছে, এদেশে আদিবাসী নেই!
যে সরকারপ্রধান বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন, আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করেছেন, সেই সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে কেন এখন আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বলে পরিচয় দিতে রাষ্ট্রীয় চাপ দেয়া হবে? সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রশ্নের এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর দেওয়া হয়নি। দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকার আমার-আপনার সকলের আছে।
সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
যেকোনো মানুষের আত্মপরিচয়ের অধিকার মানবাধিকার-তিনি আদিবাসী হতে পারেন, যেকোনো সংস্কৃতির হতে পারেন, হতে পারেন যেকোনো ভাষাভাষীর।
পরিচয় ঠিক করে দেওয়াটা রাষ্ট্রের বা সরকারের কাজ না। কারো সাংস্কৃতিক পরিচয়, আত্মপরিচয় পরিবর্তন করে দেওয়ার অধিকার সরকারের নেই। বর্তমান সরকার এটা করেওনি কখনো। কিন্তু ২০১১ সালের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী যখন পাশ হয়, তার আগে সংবিধানে কিছু ছিল না। ২০১১ সালের পর সংবিধানে ২৩ এর (ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়। সেখানে তিনটি টার্মিনোলজি ব্যবহার করা হল: উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়। ২০১১ সালের আগে সংবিধানে উপজাতি, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী বলে কিছু ছিলো না।
এগারো সালে আদিবাসী হিসেবে সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয় আমাদের। আমি সংসদীয় কমিটিতে হাজির হয়ে কথা বলেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংবিধানে আসলো ক্ষুদ্র উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়। সংবিধানে থাকুক। সংবিধান কিন্তু এটা বলেনি যে আমাদের আদিবাসী বলা যাবে না, গারো, সাঁওতাল বলা যাবে না। এমন কিছুই বলা হয়নি।
এবছর যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটা কয়েক বছর ধরে দেখছি। এবার কিন্তু আমাদের বলেনি আমি সঞ্জীব দ্রং আদিবাসী পরিচয় দিতে পারবো না। এটা বলা হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের টেলিভিশন শাখা, টেলিভিশন মালিকদের। তারা যেন টিভি অনুষ্ঠানে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করেন, সেকথা বলা হয়েছে। আমাদের বিষয়ে আগে প্রচুর টকশো হতো। এবার তেমন একটা হয়নি। শুধু আমি তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে কথা বলেছি।
তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, টিভি অনুষ্ঠানে যারা আসেন, তারা যেন এই আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করেন, এটা সংবিধানে নেই। আমি শক্তভাবে বলতে চাই একথা ভুল। সংবিধানে আপনার নামও নেই, আমার নামও নেই। অনেক কিছুই নেই সংবিধানে। সংবিধান বলেনি যে আদিবাসী বলা যাবে না। সংবিধান শুধু চারটা শব্দ ব্যবহার করেছে সেখানে: উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়। বলা হয়েছে, "এই মানুষদের অনন্য বৈশিষ্ট্য, আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং বিকাশে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।"
জাতিসংঘ যখন ইন্ডিজিনাস পিপলস ঘোষণাপত্র বা স্থায়ী ফোরাম গঠন করে, তখন কোনো সংজ্ঞা দেয়নি। কারণ আমরা আদিবাসীরাও চাইনি।
সংজ্ঞা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। জাতিসংঘ বলছে, এই মানুষগুলো প্রান্তিক, সারা পৃথিবীতে এরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। ঐতিহাসিক অবিচারের শিকার হন।
বাংলাদেশে যারা আদিবাসী শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তাদের সঙ্গে অনেকেই একমত নন। ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনেকে প্রতিবাদও করেছেন।
এই বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার। এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়া দরকার । এখানে দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এখন বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে: আদিবাসীদের অস্বীকৃতি জানাচ্ছে হচ্ছে। পৃথিবী দেখছে, তাদের পরিচয়কে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই পরিচয় বদলে দেওয়ার কোনো অধিকার, নৈতিকতা কারো নাই।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশ। তারা ‘ইন্ডিজেনাস পিপল’ শব্দ ব্যবহার করছে। জাতিসংঘ তো ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বলছে না।
ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে কেউ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলেনি। নরেন্দ্র মোদীও বলেননি, রাহুল গান্ধীও বলেনি, বলেননি মমতা ব্যানার্জিও। দ্রৌপদী মুর্মু ভারতে আদিবাসী হলে বাংলাদেশে ‘নৃ-গোষ্ঠী’ হন কীভাবে? ‘নৃ’ মানে মানুষ, ক্ষুদ্র মানে ছোট। তাহলে অর্থ কী দাঁড়ায়?
বাংলাদেশের ভয়টা মূলত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র নিয়ে। ‘ইন্ডিজেনাস পিপল’ যদি বলা হয়, তাহলে বাংলাদেশে আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিভিন্ন অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। না দিলে তখন জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে।
আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছি, জাতিসংঘ আসলে তো ভালো। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য। জাতিসংঘ যদি আদিবাসীদের সহযোগিতা করে সেটা তো ইতিবাচক।
কিন্তু তাদের কারো কারো ধারণা আদিবাসী বললে জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী ভূমির অধিকার দিয়ে দিতে হবে। কারণ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার, ঐতিহ্যগত অধিকার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে কথাগুলো বলা আছে।
অলিক মৃ
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
আমরা গত ৫ আগস্ট সব ছাত্র সংগঠন মিলে শাহবাগে প্রতিবাদ করেছি। বারবার বিভিন্ন পরিপত্র দিয়ে রাষ্ট্র তথাকথিত ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ পরিচয় চাপিয়ে দিচ্ছে আমাদের ওপর। তারা বলছে, এই নামেই যেন নিজেদের আমরা আখ্যায়িত করি।
যেন নিজে থেকে কোনো নাম গ্রহণ না করি।‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ আসলে কী, সেটাই আমরা জানি না! বারবার বলেছি আমরা সবাই আদিবাসী। কিন্তু রাষ্ট্র যেটা বলছে, তা আমাদের জন্য অপমানজনক। কোনো জাতিগোষ্ঠীই ক্ষুদ্র হতে পারে না। সংখ্যায় কম বলে যে সে ক্ষুদ্র; তা কখনই হতে পারে না।
অনিমেষ রায়
হাজং সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি
আদিবাসী থেকে যেভাবে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বলা হচ্ছে এখানে আপত্তির ব্যাপার অবশ্যই আছে। এটা একটা আপত্তিকর শব্দ। আমরা ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হতে যাব কেন?আদিবাসী বলতে কী বোঝায়, সেটা সবাই জানেন। সেখান থেকে আমাদের এখন দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
অথচ একটা সময় আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আবার কেন তারা সরে যাচ্ছে? আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে কাদের স্বার্থে আঘাত আসবে, সেটা আলাদা করে ভাবার ব্যাপার। বিষয়টা আমাদের ভাবাচ্ছে। পরিচয় সংকটে ফেলে দিচ্ছে। একটা সময় আমাদের মেনে নিয়ে যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই সম্মানটুকু ফেরত চাই।