আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পদার্থ, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করার কথা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি’র। কিন্তু সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে। তাও রেকর্ড হারে। মূল্যবৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া এবং হার নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রায় প্রতিদিন মন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে নানা ধরনের যুক্তি তুলে ধরছেন। এই পরিস্থিতিতে ভয়েস অফ আমেরিকার অমৃত মলঙ্গীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকা: শুরুতেই সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটি করতে চাই। জ্বালানি তেলের দাম ধাপে ধাপে না বাড়িয়ে যেভাবে এক লাফে বাড়ানো হলো, এটা আইনের ব্যত্যয় কি না? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও আমি প্রশ্নটা করেছিলাম, তিনি বলেছেন এটা বিইআরসি ভালো বলতে পারবে।
আব্দুল জলিল: দেখুন আমরা গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করলেও পেট্রোলিয়াম পদার্থ জ্বালানি তেলের মূল্যহার নির্ধারণ করি না। সরকার যেহেতু ডি-ফ্যাক্টোভাবে এটি করেছে, তাই এ ব্যাপারে কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই।
ভয়েস অফ আমেরিকা: কিন্তু আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ, গ্যাসের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম পদার্থের মূল্যহারও তো বিইআরসি’র নির্ধারণ করার কথা।
আব্দুল জলিল: বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩-এর ২২ (খ) ধারা মতে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম পদার্থের মূল্যহার নির্ধারণ করার আইনগত দায়িত্ব কমিশনের। এই আইনের অর্থাৎ বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৩৪(১) ধারায় উল্লেখ আছে, মূল্যহার নির্ণয়ের জন্য কমিশন সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে মূল্যহার সংক্রান্ত নীতিমালা ও পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়ন করবে এবং সেই প্রবিধান অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার (ট্যারিফ) নির্ধারণ করা হবে।
দশ বছরেরও বেশি সময় আগে কমিশন থেকে পেট্রোলিয়াম পদার্থের মূল্যহার নির্ধারণের জন্য তিনটি প্রবিধান প্রস্তুত করে সেগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রবিধানগুলো চূড়ান্ত হয়ে ফেরত আসেনি। ফলে বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার বাধ্যবাধকতার কারণে এই মূল্যহার নির্ধারণ করতে পারছে না। অর্থাৎ প্রবিধান চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশন পেট্রোলিয়াম পদার্থের মূল্যহার নির্ধারণ করতে আইনগতভাবে জটিলতায় নিপতিত।
ভয়েস অফ আমেরিকা: তাহলে আপনারা এখন কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত?
আব্দুল জলিল: কমিশন এখন গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করছে, বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করছে। এই প্রবিধানগুলো পাস হয়েছে। আমরা লাইসেন্স দিচ্ছি। সালিশ-মীমাংসা করছি।অন্যান্য সকল কাজ করছি।
ভয়েস অফ আমেরিকা: ২ আগস্ট আপনি গণমাধ্যমে বলেছেন, এলএনজি আমদানির জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে পেট্রোবাংলাকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিইআরসি অবগত নয়। আইন ও নীতিগতভাবে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছিলেন আপনি। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন?
আব্দুল জলিল: এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নই। আর আমরা কেনো যোগাযোগ করবো; এখানে বিষয়টা হলো পেট্রোবাংলা যদি গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে এ বিষয়ে কোনো ফান্ড ব্যবহার করে থাকে, তাহলে অবশ্যই লিখিতভাবে জানানো এবং অনুমোদন গ্রহণের দায়িত্ব তার। আমরা লিখিতভাবে এখনো কিছু জানতে পারিনি। সর্বশেষ যেটা নিয়েছে, এটা আমাদের লিখিতভাবে জানায়নি।
ভয়েস অফ আমেরিকা: ভর্তুকি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আপনারা কি এ বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেন? ভর্তুকির বিষয়ে আপনার অবস্থানও জানতে চাই।
আব্দুল জলিল: ভর্তুকির বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে বিইআরসি’র আইনগত কোনো দায়িত্ব নেই। তবে ট্যারিফ নির্ণয়ের সময় সরকার যদি কোনো ভর্তুকি দিয়ে থাকে, তখন এটা বিবেচনায় রেখে নির্ধারণ করা হয়।
ভয়েস অফ আমেরিকা: একটু গ্যাসের প্রসঙ্গে আসতে চাই। এলএনজি আমদানি নিয়ে অনেক আলোচনা। গত কয়েক দিনে যত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, প্রায় সবাই বলেছেন নিজস্ব গ্যাসের অনুসন্ধান না করে এলএনজি আমদানি করা ভুল সিদ্ধান্ত। আপনাদের ব্যাখ্যাটা জানতে চাই।
আব্দুল জলিল: আমি আবারও বলছি আইনের ২২ (ঝ) ধারা মতে সরকারকে এনার্জি বিষয়ক পরামর্শ দেয়ার এখতিয়ার বিইআরসি’র আছে। বিইআরসি তার ট্যারিফ আদেশ এবং চিঠিপত্রসহ অফিশিয়াল অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে সরকারকে বিষয়গুলো অবহিত করে। আমাদের গত প্রত্যেকটি ট্যারিফ আদেশে এ বিষয়ক অনেক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনানুষ্ঠানিকভাবেও এটি হয়ে থাকে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: একটু নির্দিষ্ট করে জানতে চাই, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কি না?
আব্দুল জলিল: অনুসন্ধান করাটা বিইআরসি-এর দায়িত্ব না। এটা সরকারের দায়িত্ব। তবে গত গ্যাস ট্যারিফ আদেশে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ও নির্দেশনা রয়েছে।