অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মানব পাচার, শিশু সৈন্য নিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় রয়েছে রাশিয়া


ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ২০২২ ট্রাফিকিং ইন পার্সনস রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন৷ ১৯ জুলাই, ২০২২।
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ২০২২ ট্রাফিকিং ইন পার্সনস রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন৷ ১৯ জুলাই, ২০২২।

যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার রাশিয়াকে মানব পাচার এবং জোরপূর্বক শ্রমের "নীতি বা প্যাটার্ন" এর সাথে জড়িত বা যাদের নিরাপত্তা বাহিনী বা সরকার সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী শিশু সৈন্য নিয়োগ বা ব্যবহার করে, সেই সব দেশের তালিকায় রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের বার্ষিক মানব পাচার প্রতিবেদন-এ তালিকাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা প্রথমবারের মতো ২০১৯ কংগ্রেসের ম্যান্ডেটের অধীনে একটি " স্টেট -স্পন্সরড ট্রাফিকিং ইন পার্সন" বা কোনও দেশের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত বিভাগে দেখানো হয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে এই প্রতিবেদন জুড়ে রাশিয়ার কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে এবং নথিতে লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থী যে দেশে পালিয়ে গেছে সেখানে পাচারের শিকার হতে পারে এমন আশংকার কথা বলা হয়েছে।

"লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়কে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে... কেউ কেউ সম্পূর্ণভাবে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।

ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাস এই প্রতিবেদনে ব্যক্ত অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধের কোনও সাড়া দেয়নি।

ব্লিংকেন বলেন যে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় আড়াই কোটি মানুষ পাচারের শিকার হয়েছে।

রাশিয়া ছাড়াও, নতুন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক বিভাগে আফগানিস্তান, বার্মা, কিউবা, ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং মানব পাচারের "নথিভুক্ত 'নীতি বা প্যাটার্ন' সহ অন্যান্য পাঁচটি দেশকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে," সরকার-অধিভুক্ত খাতে জোরপূর্বক শ্রম, যৌনতা সরকারি ক্যাম্পে দাসত্ব বা শিশু সৈন্য হিসেবে নিয়োগ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিবেদনে ১২টি দেশের একটি পৃথক তালিকা রয়েছে, যারা শিশু সৈন্য নিয়োগ করে বা নিয়োগ দেয়। যার মধ্যে রাশিয়া এবং নতুন রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষক বিভাগে অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশও রয়েছে।

তবে কেন প্রতিটি সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু প্রতিবেদনের স্বতন্ত্র দেশের অধ্যায়গুলি প্রতিটিতে পাচারের সংখ্যা এবং তারা কীভাবে এটি মোকাবেলা করছে, তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনে প্রতিটি দেশের প্রচেষ্টাকে চারটি স্তর অনুসারে স্থান দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছরের "পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের" পরে, "মিডিয়া রুশ বাহিনী শিশুদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার নতুন অসমর্থিত প্রতিবেদন তুলে ধরেছে।"

সেখানে প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়েছে যে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন বাহিনী শিশুসহ হাজার হাজার ইউক্রেনীয়কে "বাছাই করার শিবির" এ যেতে বাধ্য করেছে, যেখানে তাদের নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে, রাশিয়ার পাসপোর্ট নিতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে এবং তারপরে রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মানব পাচারের বিরুদ্ধে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের স্বীকৃতিসূচক সম্মাননা জানিয়ছে। তাদেরই একজন হচ্ছেন বাংলাদেশের তারিকুল ইসলাম। তিনি মানব পাচার বিরোধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে আসছেন সেই ২০১৭ সাল থেকে । তিনি মানব পাচারকারীদের ব্যাপারে তদন্ত করতে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে অবিরাম সহায়তা দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশে ব্রিটেন ভিত্তিক সংগঠন জাস্টিস এন্ড কেয়ারের শাখাও স্থাপন করেন।

ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে মানবপাচারের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “মানব পাচার বহুমুখি ব্যাপার । মানব পাচার বিভ্ন্নি ভাবে হয়ে থাকে । আমি সামগ্রিক ভাবে বলবো যে বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা দেখছি যে প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ মামলা এই মানব পাচারের ব্যাপারে পুলিশে রিপোর্ট হচ্ছে। এগুলোর ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে”। মানব পাচারের শিকার যে সব ব্যক্তি দেশে ফিরে আসতে পারছেন সরকার ও বেসমারিক সংস্থা অর্থাত্ এনজিও সম্মিলিত ভাবে তাদের আশ্রয় এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদানে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে, ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের এই প্রশ্নের জবাবে তারিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথমত মানব পাচারের যারা শিকার তাদের চিহ্নিত করাটা খুব জরুরি। তার পর তাদেরকে ট্রমামুক্ত করতে হবে। প্রচেষ্টা চলছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রি-ইন্টিগ্রশনের ব্যবস্থা করতে। সরকার সামগ্রিক ভাবে এই সব বিষয়ে চেষ্টা করছে”।

XS
SM
MD
LG