বাংলাদেশে, ২০০১ সালের রমনা বটমূল গণহত্যা মামলাসহ দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক ব্যক্তিকে বুধবার (২৫ মে) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মুফতি আব্দুল হাই হরকাত-উল-জিহাদ-আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতা আমির।
র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া উইং) ইমরান খান জানিয়েছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকা থেকে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় যে, আদালত, ১৩টি ফৌজদারি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আব্দুল হাই গ্রেনেড হামলা মামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলার অভিযুক্ত ছিলেন তিনি।
তিনি কুমিল্লা জেলার সাতটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরওয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আব্দুল হাই ২০০৬ সাল থেকে পলাতক। কুমিল্লা জেলায় তার শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার শ্বশুর গৌরীপুর বাজারে ডিলারশিপের মাধ্যমে, ভোজ্যতেল ও কেরোসিন তেলের ব্যবসা করতেন। আব্দুল হাই তাকে সহযোগিতা করতেন।
ইমরান বলেন, ‘২০০৯ সালে তিনি কুমিল্লা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখান থেকে র্যাব তাকে আটক করে।’
এর আগে, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল, রমনা বটমূল গণহত্যা মামলার আরেক পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আবদুল করিম ওরফে শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার একটি আদালত ২০০১ সালের রমনা বটমূলে বোমা হামলার জন্য, আট জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২; ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০০০ সালের ২০ জুলাই, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফুর রহমান সরকারি উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে পুলিশ ৭৬ কেজি ওজনের একটি ভারী বোমা খুঁজে পায়। ২২ জুলাই যেখানে একটি সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল।
এরপর ২০০০ সালের ২৩ জুলাই কোটালীপাড়া হেলিপ্যাডের কাছে থেকে সেনাবাহিনীর একটি বোমা বিশেষজ্ঞ স্কোয়াড ৪০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমাও উদ্ধার করেছিল।
২০০১ সালে রাজধানীর রমনা বটমূল এলাকায় বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সময় এক বোমা বিস্ফোরণে দশ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এরই মধ্যে তার আমেরিকান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।