কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচার করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার কোন কোন দেশে টাকা পাচার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। একই সঙ্গে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত রুলের শুনানির জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৭ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আদেশের বিষয়টি এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক নিশ্চিত করেন।
গত ১৩ মে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তার কয়েক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ভারতের ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি)। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পর ইডি সাংবাদিকদের জানায়, বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পর শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিকের সনদ সংগ্রহ করেন পি কে হালদার। পশ্চিমবঙ্গের নকল রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ডও তৈরি করান তিনি।
সংস্থাটি আরও জানায়, পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় নকল নাগরিক সনদ দেখিয়ে জমি কিনেছেন। পি কে হালদারের ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি গতকাল ১৬ মে (সোমবার) উপরোক্ত বেঞ্চের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে স্বতপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর আদালত শুনানি নিয়ে ওই রুলের ওপর ১২ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আইএলএফএসএলের গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দুদক তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার “অবৈধ সম্পদ” অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই পি কে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে যান।
এরপর “পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক” শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বতপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে দেশে ফেরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, দুদক থেকে পাঠানো নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে জারির প্রায় দুই ঘন্টা আগেই ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিকাল ৩টা ৩৮ মিনিটে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পি কে হালদার দেশত্যাগ করেন। সর্বশেষ গত বছরের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।