বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে গর্ভজাত সন্তানসহ এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে উপজেলার নড়াগাতী থানার বড়দিয়া বাজারে হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের অনুমোদনহীন বেসরকারি একটি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টির সমঝোতা করার অভিযোগ উঠেছে।
মৃত শিউলি বেগম (২৫) গোপালগঞ্জ সদর থানার বড়ফা গ্রামের জিন্নাত শেখের স্ত্রী ও খাশিয়াল ইউনিয়নের পেচী ডুমুরিয়া গ্রামের আকবর মোল্যার মেয়ে। শিউলি বেগমের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই শুক্রবার রাতেই তার লাশ দাফন করা হয়।
এ ঘটনা তদন্তে শনিবার দুপুরে নড়াইল সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার কালিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে দুই চিকিৎসকসহ মোট তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ও মালিকপক্ষ পলাতক রয়েছেন।
মৃতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সিজারিয়ানের জন্য পূর্ব নির্ধারিত দিনে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শিউলি বেগম। গোপালগঞ্জ থেকে আসা সার্জন শরিফুল ইসলাম শিউলি বেগমকে সিজারিয়ান করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যান।
সিজারিয়ানের আগে চিকিৎসক প্রসূতিকে অচেতন করার জন্য একটি ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এ সময় তার স্বজনেরা রোগীর কাছে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেতে দেয়নি। এরপরই শিউলি বেগমের মৃত্যু হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বড়দিয়া বাজারসংলগ্ন মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সন্ধ্যায় সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী পরিবার ও সালিশদাররা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সমঝোতা হওয়ার আগে শুক্রবার দুপুরে মৃতের উত্তেজিত স্বজনেরা হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুকান্ত কুমার সাহা বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক মীমাংসার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে”।
হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার অনুপ দাস বলেন, “বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে”। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।