সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে এই মাসে স্বাক্ষরিত একটি নিরাপত্তা চুক্তি পশ্চিমের বিরোধিতা সত্ত্বেও চীনা সামরিক বাহিনীকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য একটি নৌপথ খুলে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ১৪ এপ্রিল বলেছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং তার সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রতিপক্ষ জেরেমিয়া মানেলে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেছেন, চুক্তিটি দুই পক্ষকে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার বিষয়ে অনুমোদন দেবে। চুক্তির একটি খসড়া থেকে জানা গেছে, চুক্তি অনুসারে চীন সলোমনে সশস্ত্র বাহিনী পাঠাতে এবং যুদ্ধজাহাজ ভেড়াতে পারবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সকলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে. চীন-সলোমন চুক্তি বেইজিংয়ের বছরের পর বছর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বল্প জনবহুল এবং প্রায়শই দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে চীনা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পথ সুগম করবে।
“কে এই চুক্তির সূচনা করেছে? যদি এটি বেইজিং হয়, তবে বেইজিং প্রশান্ত মহাসাগরে পা রাখার চেষ্টা করছে, সম্ভবত সামরিক ঘাঁটির আকারে নয় তবে একটি চুক্তির আকারে। এটা তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে সম্প্রসারণ করতে সহজতর করবে”, মানোয়ার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ স্টাডিজের অধ্যাপক তারসিসিয়াস কবুতাউলাকা বলেছেন।
হোয়াইট হাউজ সূত্রে জানা গেছে, চীন চুক্তিটির সূচনা করেছে।
ধাপে ধাপে
নিরাপত্তা চুক্তি অনুসারে, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটির অনুরোধে চীনের পুলিশ বা সামরিক কর্মীরা সলোমনে যেতে পারে, কবুতাউলাকা বলেছেন।
এর অর্থ দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত চীনা নাগরিকদের সাহায্য করা, তিনি বলেন।
হাওয়াইয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের সিনিয়র ফেলো ডেনি রয় বলেছেন, গত বছর দাঙ্গা এবং ২০০৬ সালের অস্থিরতার সময় চীনা ব্যবসা মালিকেরা “সাঙ্ঘাতিক” ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন।
নিকটবর্তী জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি নিতে চীন ইতোমধ্যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বিরোধিতা কাটিয়ে ওঠা
সলোমন সরকার ২০১৯ সালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর, নভেম্বরে সলোমনে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা চীনের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এ সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দাঙ্গায় রূপ নেয়।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ বলেছে যে, তারা নিরাপত্তা চুক্তির কারণে “গভীরভাবে হতাশ”।
চীনের তুলনায় ঐতিহাসিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি তহবিল সরবরাহ করেছে, রয় বলেন। চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক এখন নিজস্ব বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে উত্তেজনাপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়া আশংকা করছে যে, তাদের সীমান্তের অদূরে একটি চীনা সামরিক ঘাঁটি “অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হুমকি হবে”, রয় বলেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা চুক্তির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং জাপানের মন্ত্রিপরিষদের প্রধান সচিব বলেছেন, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে “অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে সামান্যতম পরামর্শ ছাড়াই রহস্যজনক ও অস্পষ্ট চুক্তির প্রস্তাব” করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ বলেছেন, সলোমনের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা অন্য কোনো পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। “প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলো যেমন সলোমন দ্বীপপুঞ্জ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করতে পারে, তেমনি তাদের অন্য দেশের সঙ্গেও চুক্তি করার অধিকার আছে”, তিনি বলেন।