অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মারিউপোলের চারপাশে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে, দক্ষিণ বন্দরে জোর প্রতিরোধ চলছে


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রেস অফিসের সরবরাহকৃত ভিডিওর এই ছবিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে বক্তব্য রাখছেন। ১৫ এপ্রিল ২০২২। জেলেন্সকি বলেছেন, তার দেশ মারিউপোলে রাশিয়ার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রেস অফিসের সরবরাহকৃত ভিডিওর এই ছবিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে বক্তব্য রাখছেন। ১৫ এপ্রিল ২০২২। জেলেন্সকি বলেছেন, তার দেশ মারিউপোলে রাশিয়ার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বলেছেন, দক্ষিণের শহর মারিউপোলে রাশিয়ার অব্যহত আক্রমণের মধ্যেই দেশটি শহরটিতে রুশ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে।

জাতির উদ্দেশে তার রাতের ভাষণে, জেলেন্সকি বলেন, তিনি মারিউপোলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য দেশের সামরিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, সেখানে শহরের ইলিচ স্টিল ও আয়রন ওয়ার্কস প্ল্যান্টের চারপাশে তীব্র লড়াই চলছে।

জেলেন্সকি বলেন, “এখন বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা যাবে না, তবে আমরা আমাদের লোকদের বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি”।

“যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সামরিক বাহিনীর সাফল্য সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ, ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু তা এখনো আমাদের দখলদারদের আমাদের ভূমি থেকে উৎখাতের জন্য যথেষ্ট নয়”, তিনি বলেন। “আমরা তাদেরকে আরও পরাস্ত করব”।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট শুক্রবার সিএনএনকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা মারা গেছেন এবং আরও ১০ হাজার আহত হয়েছেন। তিনি রাশিয়ার হতাহতের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে ২০ হাজার বলে মন্তব্য করেন।

রাশিয়া মার্চের শেষের দিকে বলেছিল, ইউক্রেনে তাদের ১ হাজার ৩৫১ সেনা নিহত হয়েছে। তবে একজন জ্যেষ্ঠ নেটো সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৭ থেকে ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ওলেক্সান্ডার মোতুজয়ানিক বলেছেন, রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর প্রথমবারের মতো শুক্রবার মারিউপোল আক্রমণ করতে দূরপাল্লার বোমারু বিমান ব্যবহার করেছে।

কিয়েভে আক্রমণ

এই সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ মসকভা ডুবে যাওয়ার পর শুক্রবার ভোরে রাশিয়া কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা শুক্রবার ইউক্রেনের দাবিকে সমর্থন করেছেন যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী জাহাজটিকে আঘাত করেছে, যার ফলে এটি ডুবে গেছে। রুশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, জাহাজটিতে আগুন লেগেছে।

এ ছাড়াও কিয়েভ অঞ্চলে, রাশিয়ার বাহিনী প্রত্যাহারের পরে ৯০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিয়েভের আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন।

রাশিয়া ইইউর কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে

শুক্রবার রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৮ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করায় রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এই মাসের শুরুতে “কূটনৈতিক মর্যাদা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য” ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ান ফেডারেশনের স্থায়ী মিশনের ১৯ সদস্যকে বহিষ্কার করার ব্রাসেলসের সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক তার বিবৃতিতে বলেছে, তারা রাশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মার্কাস এডেরারকে তলব এবং তার কাছে একটি প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করেছে। ইইউ কূটনীতিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাশিয়া ত্যাগ করতে হবে, মন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে।

রাশিয়ায় ইইউ মিশন রুশ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে “প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছে।

লক্ষ্যবস্তু দনবাস

উত্তর ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করার পরে, রাশিয়া বলেছিল যে, তার প্রধান যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দনবাস দখল করা। দুটি প্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল যা ইতিমধ্যেই আংশিকভাবে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে রয়েছে এবং এটি কিয়েভ থেকে আলাদা হতে চায়।

এ ছাড়া রাশিয়া পূর্বাঞ্চলে হাজার হাজার সেনা সমাবেশ করেছে। ইউক্রেন ধারণা করছে, একটি বড় হামলা হতে পারে।

মস্কো বলেছে যে, তারা শিগগিরই মারিউপোলের দক্ষিণ-পূর্বের সমস্ত অঞ্চল দখল করবে। সে রকম ঘটলে এটিই হবে রাশিয়ার দখলকৃত প্রথম বড় শহর।

যুদ্ধের আগে যেখানে চার লাখ লোকের বসতি ছিল সেই কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের বন্দর শহরটি সাত সপ্তাহের অবরোধ এবং বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ শহরের ভেতরে আটকা পড়েছেন।

সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ মারা গেছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, রয়টার্স ও এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG