ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা দারুণভাবে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাব দিতে নেমে দিন শেষ স্কোরবোর্ডে ৯৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছে তারা। আউট হয়ে ফিরে গেছেন সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। ৪৪রান নিয়ে অপরাজিত আছেন মাহমুদুল হাসান। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন 'নাইটওয়াচম্যান’ তাসকিন আহমেদ।
বাংলাদেশের ইনিংসে ৪৯ ওভার খেলা হয়েছে আজ। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার সিমন হারমার ও কেশব মহারাজই এর মধ্যে করেছেন ৩৯ ওভার। দুই স্পিনার হারমার ও মহারাজ অধিনায়ক ডিন এলগারের এই আস্থার দারুণ প্রতিদানই দিয়েছেন। মহারাজ উইকেট না পেলেও ১৯ ওভারে ১০ মেডেন দিয়ে খরচ করেছেন মাত্র ২৪ রান। বাংলাদেশের চারটি উইকেটই তুলে নিয়েছেন হারমার, ২০ ওভারে, ৪২ রান দিয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে উল্টোস্রোতে লড়াইটা ভালোই করছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি ১৪১ বল খেলে ৪৪
রানে অপরাজিত।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা আজ ৩৬৭ রানে নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন পেসার খালেদ আহমেদ। তিনি ২৫ ওভার বোলিং করে ৯২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এর আগে বাংলাদেশের কোনো পেসারই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৪ উইকেট পাননি। মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন ৩ উইকেট, ইবাদত হোসেন ২ উইকেট। ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত তাসকিন আহমেদ ছিলেন উইকেটশূন্য।
জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। সাদমান ইসলাম আর মাহমুদুল হাসান বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন। কিন্তু হারমানের বলে দলীয় ২৫ রানে, একটু নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাদমান। এরপর অবশ্য মাহমুদুল ও তিনে নামা নাজমুল হোসেন পাল্টা লড়াইটা বেশ ভালোই
করেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৫ রান যোগ করেন তারা। কিন্তু দলের সংগ্রহ যখন ৮০, তখনই হারমারের দুর্দান্ত বলে বোল্ড হন নাজমুল। আউট হওয়ার আগে তিনি ৮৭ বলে ৩৮ করেন। এরপর মাত্র ৬.২ ওভারের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুটিই নেন হারমার। অধিনায়ক মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল কিগান পিটারসনকে ক্যাচ দেন সিলি পয়েন্টে। মুশফিক উইকেটের পেছনে
ক্যাচ দেন কাইল ভেরেইনাকে।
এর আগে, স্বপ্নের মতো একটা দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারেই পেসার খালেদ আহমেদ পরপর দুই বলে ফেরালেন কাইল ভেরেইনা ও উইয়ান মুল্ডারকে। ৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা তখন হঠাৎ করেই ২৪৫/৬। ডারবান টেস্টের প্রথম দিন যেখানে প্রথম সেশনে উইকেটের জন্য হাহাকার করেছে বাংলাদেশ, সেখানে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই জোড়া উইকেট! প্রথম সেশনে আরও ২
উইকেট তুলে নিলে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সংগ্রহ তিনশ পেরোবে কিনা, এমন অবস্থা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ দুই জুটির কল্যাণে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৬৭।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেও খালেদ আঘাত হেনেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ দুই জুটি বাংলাদেশকে হতাশায় ফেলে। অষ্টম উইকেট জুটিতে উইলিয়াম ও হারমার ৩৪ রান যোগ করেন। শেষ উইকেট জুটিতে হারমার অলিভিয়েরকে নিয়ে গড়েন ৩৫ রানের আরও একটি জুটি।
সকালের সেশনে বাংলাদেশি বোলাররা দারুণ বোলিং করেছিলেন। দুর্দান্ত ছিল তাদের লাইন ও লেংথ। আঁটসাট বোলিংয়ে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান তোলাই কঠিন করে তুলেছিলেন তারা। খালেদ আজ ৩ উইকেট নিয়েছেন। প্রথমে কাইল ভেরেইনাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। ভেরেইনা রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি। পরের বলেই উইয়ান মুল্ডারকে গালিতে মাহমুদুল হাসানের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন। নিজের বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি ধরেন মাহমুদুল। তিনি দিনের ষষ্ঠ ওভারেই হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন।
শুরুর ধাক্কা সামলে আগের দিনের অপরাজিত টেম্বা বাভুমাই দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে কেশব মহারাজ ৫৩ রান যোগ করেন। তিনি নিজেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন শতরানের দিকে। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলে শেষ পর্যন্ত ১৯০ বলে ৯৩ রান করে বোল্ড হন বাভুমা। অফ সাইডে খেলার জন্য জায়গা করতে চেয়েছিলেন বাভুমা। কিন্তু বল ব্যাট মিস করে ভেঙে দেয় তার লেগ স্টাম্প।
বাভুমা ফেরার পরের বলেই ফেরেন ১৯ রান করা কেশব মহারাজ। ইবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হন তিনি। এরপর লিজাড উইলিয়ামসকে প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইবাদতের বলে আম্পায়ার উইলিয়ামসকে এলবিডব্লু ঘোষণা করলেও ডিআরএস নিয়ে বেঁচে যান তিনি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছিল।
৮ উইকেটে ৩১৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বিরতি থেকে ফেরার পর বাংলাদেশকে হতাশা উপহার দেন সিমন হার্মার। টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন তিনি আজ। সবচেয়ে বড় কথা শেষ দুই ব্যাটসম্যান উইলিয়ামস আর অলিভিয়েরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ সাড়ে
তিনশ পার করান। উইলিয়ামসকে (১২) খালেদ নিজের চতুর্থ উইকেট বানালেও অলিভিয়ের টিকে ছিলেন হারমারের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তিনি ১২ রানে মিরাজের বলে এলবিডব্লু হলে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।