“আমার স্পষ্ট মনে আছে , ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে দাদু সকলকে একটা কথা বারবার বলতেন, Be prepared for a severe bloodbath. বলতেন, বাংলাদেশ আসবেই, তার পতাকা আমি তুলে যাবো, হয়তো সেটা আমার রক্তের উপরেই হবে।”-কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিবীদ, মানবাধিকার কর্মী এবং জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আরমা দত্ত। আরমা দত্তের আরেকটি বড়ো পরিচয়, তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে সমান মর্যাদা দানের দাবি উত্থাপনকারী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন রাজনীতিক, সমাজকর্মী ও ভাষাসৈনিক। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পাক বাহিনী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তাঁর ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে।
ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে আলাপকালে দাদু ধীরেন্দ্রনাথ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন আরমা দত্ত। তাঁর স্মৃতিচারণে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বমুহুর্তের ঘটনাবলী।
আরমা দত্ত বলেন, “দাদু একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাঁর ছিলো সিংহের মতো সাহস। তিনি ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্রথম গণপরিষদের অধিবেশনে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে বাংলাকেও ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব তোলেন। সে প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনকে বাস্তব রূপদান করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু এই আন্দোলনের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
১৯৭১ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। রোকেয়া হলে থাকি। সে বছরটা ছিলো আমাদের অনার্স ফাইনাল দেয়ার বছর। ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই আসলে ছাত্র আন্দোলনের শুরু এবং তা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপ নিচ্ছিলো। ১৯৬৯ সালে সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান। জানুয়ারি মাসে ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হয়। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করে আইয়ুব সরকার। আমরা খালি পায়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করা শুরু করলাম। এভাবেই আন্দোলন চলতে থাকলো। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়। কুমিল্লায় গিয়ে আমি প্রথমবারের মতো ভোট দেই। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় হলো। তখন মনে হলো এবার আমরা স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু আমার দাদু বারবার ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছিলেন, এই স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্র কী তা জানে না, গণতন্ত্রকে সম্মানও করে না। দাদু বারবারই বলছিলেন, ভুট্টো এটা মেনে নেবে না। আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা দিতে চাইবে না এবং দেখবে এটা নিয়ে আমরা একটা কঠিন অবস্থায় পৌঁছবো। সে সময়ই দাদু বারবার বলতেন ‘Be prepared for a severe bloodbath.’ আমি জিজ্ঞেস করতাম দাদু এর মানে কী? দাদু বলতেন, ‘বাংলাদেশ আসবেই, তার পতাকা আমি তুলে যাবো, হয়তো সেটা আমার রক্তের উপরেই হবে।’
মার্চের ৭ তারিখ বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন। আমরা রোকেয়া হলের ছাত্রীরা যাবো। ৭ মার্চ সকাল ৬টায় দাদু কুমিল্লা থেকে আমার মাকেসহ গাড়ি পাঠিয়ে দেন। নির্দেশ দেন আমাকে মা’র সাথে কুমিল্লা চলে যেতে হবে। দাদু বুঝতে পেরেছিলেন, সেদিন কিছু একটা ঘটবে। রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাবে, সেই আশঙ্কায় আমাকে নিতে পাঠিয়েছিলেন। আমরা কুমিল্লার যে কয়জন ছেলেমেয়ে ছিলাম, সবাই একসাথে, এক কাপড়ে রওনা দিলাম। বাড়ি পৌছে দাদুকে বারান্দায় পায়চারী করতে দেখি। দাদু আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। দাদুকে বললাম, তুমি আমাকে আনলে কেনো? আমার তো ঢাকায় অনেক কাজ। দাদু কুমিল্লার ভাষায় কথা বলতেন। বললেন, ‘কাজ তো থাকবেই। আজকে দেখবা মুজিব একটা এসপার ওসপার করে দিবে। তারপর সব অচল হয়ে যাবে। ওইদিকে তুমি আটকায় পড়বা, এইদিকে আমরাও আটকায় পড়ব। এখন আর কোনো চিন্তা নাই। বাঁচলে একসাথেই বাঁচমু, মরলে একসাথেই মরমু।’
২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যা শুরু হয়। রাত একটার মধ্যে আমরা খবর পেলাম। দাদুর চুপ করে অনেকক্ষণ বসে রইলেন। ২৬ মার্চ কুমিল্লা শহর যেন একটা শ্মশান। শুধু একটু পরপর বিকট আওয়াজ করে মিলিটারি লরি ও জিপ ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে। দাদু বলতে থাকলেন রেডিওতে পৃথিবীর যা খবর পাও সংগ্রহ কর। আমরা পাগলের মত বিবিসি এবিসি ভোয়া আকাশবাণী ও ঢাকার খবর শুনতে চেষ্টা করছি। বিদেশি রেডিওর মাধ্যমে জানলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে নিয়ে গেছে এবং ঢাকাতেও গণহত্যা শুরু হয়েছে। ২৭ তারিখে একই টেনশন। দাদুর উচ্চ রক্তচাপ ছিল, তা ভীষণ ভাবে বেড়ে গেল। বারবার মাথা ধুয়ে বসেছিলেন। একসময় তিনি আমার মা, আমার কাকা ও আমাকে ডেকে বললেন সময় খুব কম। তোমাদের কিছু কথা বলা দরকার । আমার বাঁচার খুব প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের জন্য । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার সম্ভাবনা নেই। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এখন যদি আমি পালাই তাহলে মিলিটারিরা আমাকে খুঁজে না পেলে আশেপাশের সব লোককে মেরে আগুন লাগিয়ে সব শেষ করে দেবে। আমাকে না পেলে নিরাপদ লোকগুলির প্রাণ যাবে সেটা তো হতে পারে না। আমাকে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিতে এসে দুটো জিনিস করতে পারে। প্রথম হতে পারে তারা আমাকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে গিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোর চেষ্টা করবে। তা যদি করে তাহলে আমি তাদেরকে একটা কথাই বলবো, to stop killing unarmed people. একথা বললে তারা আমাকে অত্যাচার করে মেরে ফেলবে ওখানেই। আর একটা হতে পারে মিলিটারি আমাকে এখানে গুলি করে মারতে পারে। আমার বিশেষ অনুরোধ, তোমরা আমার লাশটা বারান্দায় ফেলে রেখো যাতে সকলে আমার মৃতদেহ দেখে বিদ্রোহ করার জন্য মনে সাহস পায় । এটাও বললেন, দেখো আমাকে দু একদিনের মধ্যেই এসে নিয়ে যাবে।
দাদু যেন চোখের সামনেই পরিণতি দেখতে পাচ্ছিলেন। আর আমরা শুধু ছটফট করছিলাম যন্ত্রণায়। ২৮ মার্চ দুপুর দুইটায় কারফিউ কিছুক্ষণের জন্য তুলে নিলে কুমিল্লার অনেকে দৌড়ে আমাদের বাড়িতে এসে দাদুর পায়ের ধুলো নিয়ে গেল। সবাই যেন বুঝতে পারছিল এরপর কারফিউ তুললে এই বাড়িতে আর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত থাকবেন না। বিকেল চারটায় আবার কারফিউ শুরু হলো। সে এক অসহ্য নীরবতা চারদিকে। আবার দাদু সন্ধ্যার সময় মাথা ধুলেন। এরপর আমাকে ডেকে বললেন, গীতাটা আনো। আমি এনে দিলাম। গীতার একটা অংশ খুলে পড়ে শোনালেন। যার অর্থ, ‘দেশের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিলে সে মরে না। সে শহীদ হয় এবং সে অবিনশ্বর, তার আত্মা কখনো মরে না।’ আমরা তখন সকলে ভীষণ অসহায় বোধ করছি। দাদু আবার বললেন, ওরা আজ রাতে আমাকে নিতে আসবে। যা বলেছি তাই করবার চেষ্টা করবে এবং কাঁদবেনা। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি শুয়ে পড়লেন। আমরা যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ রাত দেড়টার দিকে বিকট আওয়াজ হতে থাকলো আমাদের সদর দরজায়। আমার কাকু ছুটে এসে মাকে বললো, মিলিটারি এসেছে কি করব? মা বলল, দরজা খুলে দাও। আমরা ধরমর করে উঠে কাঠের পুতুলের মত দাড়িয়ে থাকলাম। অনেক ভাংচুরের আওয়াজ শুনতে পেলাম। একটু পরে দেখলাম চার-পাঁচজন জন মিলিটারি মা’র ঘর থেকে আমাদের ঘরে ঢুকছে এবং আমাকে বলছে দরজা খুলতে। আমি একে একে দরজা খুলতে থাকলাম। তারা আমার পেছনে বেয়নেট উঁচিয়ে চলতে থাকলো। আমি আবার ঘুরে এসে মা’র ঘরে থামলাম। তারা সেখান থেকে মার্চ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি তাদের পেছনে পেছনে দৌড় দিলাম। গেট পার হয়ে রাস্তায় এসে থামলাম। দেখি অন্ধকারে অনেকগুলো মিলিটারি লরির লাল আলো মিটমিট করতে করতে মিলিয়ে যাচ্ছে। এরপর আবারো অন্ধকার। ওখানে অন্ধকারে আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম আমার দাদু ওই অন্ধকার চিরতরে মিলিয়ে গেছে। তারপর ঘরে ঢুকে বুঝতে পারলাম দাদুর সাথে কাকুও চলে গেছে। আমি মাটিতে বসে পড়লাম। আমাদের আর একসঙ্গে যাওয়া হলো না। পরদিন সকালে আমাদের গেটে দাদুর একপাটি জুতো পড়ে থাকতে দেখেছি। আমরা ২৯ মার্চ দুপুর দুটোয় অনিশ্চয়তার পথে রওনা দেই। পরে শুনেছি ১৪ এপ্রিলের দিকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট অকথ্য নির্যাতন করে আমার দাদু আর কাকুকে মেরেছে। তাদের মরদেহ আমরা দেখিনি। আমার দাদু বাংলার মাটিতে তার রক্ত, হাড়-মাংস একাকার করে মিলিয়ে দিয়ে গেল। বাংলাদেশ হলো। বাংলাদেশের পতাকা উঠলো। দাদু যা যা প্রস্তাব করেছিল ১৯৪৮ সালে, সে অনুযায়ী বাংলা ভাষা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হলো, সব হলো। শুধু আমার দাদুর কথা কেউ সোচ্চার গলায় উচ্চারণ করে না।”
আরোমা দত্ত বললেন, তিনি চান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে শুধু পরিবার নয়, স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ স্মরণ করুক। তাঁর অবদানকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা, পাঠ্য পুস্তকে বিশদভাবে উপস্থাপন করার বিষয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশের সেসময়ের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কুমিল্লার বাড়ি পরিদর্শন করে ‘ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরমা দত্ত বলেন, “হ্যা, ২০১০ সালে আমি সরকারকে বাড়িটি অধিগ্রহণ করে জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নিতে প্রস্তাব দেই। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের কুমিল্লার বাড়িটাকে মাল্টিস্টোরেড করে এর একটি অংশে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং লাইব্রেরি করবো। কয়েকটি ফ্লোরে আমরা নিজেরা বসবাস করবো। বাকিগুলো ভাড়া দিবো বা বিক্রি করবো। কারণ আমাদের ওই বাড়িটা ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। বাড়িটি নিয়ে একটা আইনি জটিলতা রয়েছে। খুব শীঘ্রই সেটা মিটবে বলে আশা করি।”
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের গ্রামের বাড়িসহ সেখানকার সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভূক্ত হয়, বেশ কিছু সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে আরোমা দত্ত জানালেন, তিনি সম্পত্তিগুলো উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নিবেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২৪শে নভেম্বর কুমিল্লা জেলার রামরাইল গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। পরবর্তী সময়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সৈনিক, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রবর্তক। স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার। ব্রিটিশ শাসনামলে রাজনৈতিক কারণে তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৭ কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তাঁর উত্থাপিত একটি ছাঁটাই প্রস্তাব বঙ্গীয় বিধানসভায় গৃহীত হওয়ায় খাজা নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভা পতন ঘটে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদের ভাষা হিসেবে ইংরেজি উর্দু গৃহীত হলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংশোধন প্রস্তাব পেশ করে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান। তার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর পরপরই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে পূর্ববাংলায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। আতাউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ববঙ্গ সরকারের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আইয়ুব খানের শাসনামলে বিনা বিচারে বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেন। ১৯৬৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু আজীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রগতিশীল ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি নিজের হাতে তার কুমিল্লার বাড়িতে তুলেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বেই ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার কুমিল্লার বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।