ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম অনেক বেশি। একইভাবে আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, গুঁড়ো দুধ, ডিম ও মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতিই মূল্যবৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়।”
রবিবার (২০ মার্চ) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত “পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অর্থনীতি” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন “স্থিতিশীল মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে দাম আকাশচুম্বী” এবং “পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি: নীতিগত অবস্থান কী হওয়া উচিত?’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ও সিনিয়র ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি, বাহ্যিক খাত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং খাত এবং সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনার ওপর আলোকপাত করেন।
গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী; কিন্তু সরকারি খাতায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে ধ্রুবক গণনা করে। অথচ এ সময়ে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশে। এটা কীভাবে সম্ভব প্রশ্ন করেন ফাহমিদা খাতুন।
জাহিদ হোসেন বলেন, “উদ্বৃত্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও সরকারের বাজেট ব্যয় বাড়ছে না।” তিনি টেকসই বিনিয়োগের জন্য দেশে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি নীতিমালার আহ্বান জানান।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বিপুল পরিমাণ আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ বাড়েনি। যার ফলে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুর্বল এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর ওপর এর বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলেছে, “খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সমস্ত উপলব্ধ নীতি সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। যার মধ্যে রয়েছে-অভ্যন্তরীণ এবং আমদানি উভয় স্তরেই অপরিহার্য পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর অব্যাহতি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি প্রসারিত করা এবং আয়কর ছাড়ের স্তর বৃদ্ধি করা”।
সিপিডি আরও বলেছে, মুদ্রাস্ফীতিজনিত প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্য স্থিতিশীল হওয়া উচিত এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিতিশীলতা প্রশমনে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত এবং ঋণ পুনরুদ্ধারের দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া উচিত।
বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও রপ্তানি বাড়েনি। কিন্তু বাস্তবের তুলনায় এটি সঠিক চিত্র নয়। নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও তীব্রভাবে বেড়েছে।
সিপিডির সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সঙ্কটাবস্থার সুবিধা নিতে সক্রিয় থাকে। তারা পণ্য মজুদ করে এবং বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। তাই রমজান মাস এবং এর পরেও পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
খোলা বাজার ব্যবস্থার (ওএমএস) মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই পণ্যগুলোর বিতরণ কার্যকরভাবে এবং কোনো দুর্নীতি ছাড়াই পরিচালনা করতে হবে; যাতে যোগ্য ব্যক্তিরা কম দামে এই পণ্যগুলো কেনার সুযোগ পান। সরকারের উচিত দরিদ্রদের সরাসরি নগদ সহায়তা প্রদান করা, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করা এবং কঠিন সময়ে তাদের বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা।
