গত সপ্তাহে মিয়ানমারের নড়বড়ে বিদ্যুত খাতের ওপর চাপ কমাতে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেশটির বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে শুক্রবার (১৮ মার্চ) একটি সূত্র জানিয়েছে। অধিকারকর্মীরা সতর্ক করেন যে, জান্তা নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যর্থ হলে কয়েক হাজার লোক চাকরি হারাতে পারেন।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের ১৩ মাসেরও বেশি সময় পরে, মিয়ানমার এখনো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত। এ ছাড়া খাদ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য, সেই সঙ্গে নিয়মিত বিদ্যুৎ ও পানি স্বল্পতার কারণে জনজীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
এমনকি মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে, প্রতি ২৪-ঘণ্টা সময়কালে দুবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। কখনো কখনো বাসাবাড়িতে প্রতিদিন ছয় ঘন্টা বিদ্যুতহীন থাকে। ইয়াঙ্গুনে আনুমানিক ৭ মিলিয়ন লোকের বসবাস। শুধুমাত্র রাজধানী নেপিডো, যেখানে সামরিক জান্তার মূল কেন্দ্র, বেসামরিক শাসনের উৎখাতের পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উপভোগ করেছে।
এই মাসের শুরুর দিকে, জান্তা ঘোষণা করেছিল যে, তারা ১২ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য বর্ধিত গ্যাসের দাম এবং জান্তা বিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের আধাসামরিক গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামোতে হামলাকে দায়ী করেছেন তারা।
যাহোক, সারা দেশে একাধিক সূত্র রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) মিয়ানমার সার্ভিসকে বলেছে যে, এই ব্যয়সংকোচন খুব কমই বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাস করেছে। তারা সামরিক শাসনের অধীনে দৈনন্দিন জীবনে যে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তার জন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইয়াঙ্গুনের থিঙ্গানগিউন শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, মার্চের শুরু থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মানুষ রান্নার জন্য কাঠকয়লার চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া পানি তুলতে তাদের বিদ্যুত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন যে, পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার সপ্তাহেও, “এর ব্যত্যয় হয়নি”।
ইয়াঙ্গুনের অন্য সূত্র আরএফএকে বলেছে যে, যখন বিদ্যুৎ চালু থাকে, তখন অনেক লোক পানি তুলতে শুরু করেন। এতে অতিরিক্ত গরম হয়ে পাম্পগুলো পুড়ে যায়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কিছু সময়ের জন্য আসে, তারা বলেন, অথচ বাড়িতে প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেখানে ট্যাঙ্কার দিয়ে পানি বিতরণ করা হয় সেখানে প্রতিদিন বিশাল লম্বা লাইন তৈরি হয়।
ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে
মনের একজন পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ব্যবসা চালানোর জন্য তাকে জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যার কারণে তার প্রতিদিন ৮০ হাজার কিয়াট (৪৫ ডলার) পর্যন্ত খরচ হয়। তার কারখানায় প্রায় ১০০ জন কর্মী কাজ করেন।
ইউনাইটেড কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের চেয়ারওম্যান ডাও মিও মায়ো আয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মার্চ মাসে কিছু পোশাক কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়েছে, একজন শ্রমিক অধিকারকর্মী মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিদ্যুৎ-নির্ভর সমস্ত কাজ কমে যেতে দেখেছি এবং বেকারত্ব বাড়ছে।”
ওই অধিকারকর্মী বলেন, ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে শ্বেপিথার ও হ্লাইংথারিয়া শিল্প অঞ্চলে ছয় লাখেরও বেশি লোক কাজ করতেন। তবে অভ্যুত্থানের পরে করোনভাইরাস মহামারি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সংখ্যাটি অর্ধেকে নেমে গেছে।
নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তি “অসম্ভব”
জাও ইয়ান নামে একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আরএফএকে বলেছেন যে, জান্তা দায়িত্বে থাকাকালে মিয়ানমারে কখনোই নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে না।
“আমাদের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো অসম্ভব। প্ল্যান্টের জেনারেটরগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন যা বিদেশ থেকে অর্ডার করতে হবে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো পাওয়া কঠিন”, জাও ইয়ান বলেন।