আফগানিস্তানে জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি টিভি ও রেডিও চ্যানেল পরিচালনাকারী একটি মিডিয়া গ্রুপ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে তালিবান কর্তৃপক্ষ টেলিভিশনে সিরিজ নাটক দেখানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
টোলো টিভি ও লেমার টিভি চ্যানেলের মালিক মোবি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা তালিবানের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এই আদেশ পেয়েছে। তালিবান মন্ত্রকথেকে জারি করা ঐ আদেশ ইসলামের গুণাগুণ প্রচার ও অপকর্ম প্রতিরোধের জন্য করা হয়েছে বলে বলা হয়।
গ্রুপটি বলেছে যে তারা ঐ আদেশ পালন করছে এবং বৃহস্পতিবার রাত থেকে "অস্থায়ীভাবে" বিদেশী নাটকের ধারাবাহিক সম্প্রচার বন্ধ করেছে।
তা ছাড়া টোলো নিউজের একজন সাবেক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ধারাবাহিক নাটকের ওপর তালিবানের নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর তালিবান কর্তৃপক্ষ চ্যানেলটির পরিচালকসহ টোলো নিউজের তিন কর্মীকে আটক করেছে।
অনেক আফগান পরিবারই টেলিভিশনে সিরিজ নাটক দেখেন, যার বেশিরভাগই তুর্কি এবং ভারতীয় নাটক । তাদের এই জনপ্রিয়তা সে দেশের সংকটাপন্ন বেসরকারী মিডিয়া সেক্টরের জন্য একটি আর্থিক নিরাপত্তা তৈরি করেছে।
"মোবি (MOBY) গ্রুপ প্রস্তাব করে যে বিদেশী নাটক সিরিজ সম্প্রচার নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য বিষয় (তালিবানের) তথ্য ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রক এবং মিডিয়া সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ কমিশনের মাধ্যমে আরও ভালভাবে আলোচনা করা যেতে পারে এবং সরকারী নীতি অনুসারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রক থেকে ঘোষণা করা যেতে পারে।” মোবি গ্রুপ টুইটে ঐ বার্তাটি দেয়ার পরে তা মুছে ফেলা হয়।
সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতে তালিবান এরই মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব করেছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত আগস্ট মাসে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে গণমাধ্যমের ২৩০টিরও বেশি আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে এবং হাজার হাজার সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন যার অধিকাংশই হচ্ছেন নারী সাংবাদিক।
গত সাত মাসে শত শত আফগান সাংবাদিক দেশ ত্যাগ করেছেন।
সাবেক আফগান সরকারের আকস্মিক পতনের আগে মোবি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থায়ন পেয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগ সাংবাদিক ও কর্মীকে গত বছর আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য তারা সহায়তাও পেয়েছিল।
তালিবানের ইসলামিক আমিরাত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের উপস্থিতি ও তাদের কণ্ঠস্বর প্রচার নিষিদ্ধ করেছে।
তালিবান কর্তৃপক্ষ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশিরভাগ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে এবং তারা এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোকে ইসলাম সম্মত নয় এবং তা নৈতিকভাবে অনুপযুক্ত বলে অভিহিত করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে আফগানিস্তানব্যাপী তালিবান বন্দুকধারীদের হাতে আফগান সাংবাদিকরা আটক হচ্ছেন এবং তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে।