চলচ্চিত্র অভিনেতা আরনল্ড শোয়ার্জনেগার, বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে রাশিয়ার মানুষদেরকে বলেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তাদের কাছে মিথ্যাচার করা হচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তিনি নিজের উচ্চাকাঙ্খার জন্য রাশিয়ার সৈন্যদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন।
শোয়ার্জনেগার রাশিয়াতে ভীষণ জনপ্রিয়। তিনি পুতিনের কাছেও জনপ্রিয় বলে ধারণা করা হয়। ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অফ রাশিয়া’ নামের টুইটার অ্যাকাউন্টটি অন্য মাত্র ২২টি অ্যাকাউন্টকে ফলো করে, যার মধ্যে একটি হল শোয়ার্জনেগারের অ্যাকাউন্টটি।
নয় মিনিটের ঐ ভিডিওতে শোয়ার্জনেগার বলেন যে, রাশিয়ার সৈন্যদের বলা হয়েছিল যে তারা ইউক্রেনে নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়বে, বা ইউক্রেনে রাশিয়ান জাতিসত্ত্বার মানুষদের রক্ষা করবে বা তারা একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে, এবং তাদেরকে সেখানে বীরের বেশে বরণ করা হবে। তিনি বলেন যে, তাদের মধ্যে অনেক সৈন্যই এখন জানে যে সেইসব দাবিগুলো মিথ্যা ছিল।
পড়ার ঘরে একটি টেবিলের পেছনে বসা শোয়ার্জনেগার সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, “এটি একটি অবৈধ যুদ্ধ”। তিনি বলেন, “আপনাদের জীবন, আপনাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, আপনাদের ভবিষ্যৎকে একটি অর্থহীন যুদ্ধের জন্য বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, যেই যুদ্ধটির প্রতি সমগ্র বিশ্ব নিন্দা জানিয়েছে”।
আবেগময় ভিডিওটি শোয়ার্জনেগার টুইটার, ইউটিউব ও ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেন। যেহেতু সেগুলোর কয়েকটির প্রচার রাশিয়াতে বন্ধ রয়েছে, সেহেতু তিনি ভিডিওটি টেলিগ্রাম নামক ম্যাসেজিং অ্যাপেও পোস্ট করেন, কারণ সেটি সেখানে নিষিদ্ধ নয়। টেলিগ্রামে ভিডিওটি ৫ লক্ষেরও বেশি দর্শক পেতে সক্ষম হয়। ভিডিওটির নিচে তার কথাগুলো রুশ ভাষায় সাবটাইটেল হিসেবে লেখা ছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক এই গভর্নর নিজের পিতা সম্পর্কে বেদনাদায়ক স্মৃতিও তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তার পিতা অ্যাডলফ হিটলারের বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার সময়ে তাকেও মিথ্যা বলা হয়েছিল, এবং তিনি লেনিনগ্রাডের যুদ্ধে আহত হওয়ার পর শারিরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় অস্ট্রিয়াতে ফিরেছিলেন।
শোয়ার্জনেগার রাশিয়ানদেরকে তাদের দেশের নাগরিকদের “ইউক্রেনে চলমান মানবিক বিপর্যয়টি” সম্পর্কে জানাতে অনুরোধ করেন। ভিডিওটিতে ইউক্রেনে বোমায় বিধ্বস্ত ভবন এবং রুশ গোলাবর্ষণের শিকার মানুষদের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এরপর তিনি সরাসরি পুতিনের উদ্দেশ্যে বলেন: “আপনি এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। আপনি এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনি এই যুদ্ধ থামাতে পারেন।”
রাশিয়ার সাথে নিজের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন শোয়ার্জনেগার। তিনি সেখানে শরীরচর্চাবিদ ও চলচ্চিত্রের অ্যাকশন হিরো হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এছাড়াও, ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে, মস্কোতে একটি সফরে সিলিকন ভ্যালির ব্যবসায়িক নেতা ও ভেনচার ক্যাপিটালিস্টদের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনি।
ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসা এবং গ্রেফতার ও ধরপাকড়ের শিকার রাশিয়ার মানুষদেরকে তিনি “আমার নতুন হিরো” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।