অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

চীনে নতুন কোভিড লকডাউনে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা


ওপর থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে চীনের শেনজেন এবং হংকং এর লক মা চাউ এর মধ্যে সংযোগ সেতু। মার্চ ১১ ২০২২। (ছবি- এপি)
ওপর থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে চীনের শেনজেন এবং হংকং এর লক মা চাউ এর মধ্যে সংযোগ সেতু। মার্চ ১১ ২০২২। (ছবি- এপি)

ওয়াশিংটন—চীনে ক্রমবর্ধমান কোভিড সংক্রমণের কারণে বেইজিং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক সংক্রমণের মুখোমুখি দেশটি। নতুন এই সংক্রমণ বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি বড় ধাক্কা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক অর্থনীতি ইতিমধ্যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে ভুগছে।

চীন সরকার রবিবার (১৩ মার্চ) ঘোষণা করেছে যে, গুয়াংডং প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনজেনকে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনে রাখা হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিলিন প্রদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যার মধ্যে উৎপাদনকেন্দ্র শহর চাংচুনও রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ), বেইজিংয়ের কাছাকাছি ল্যাংফাং শহরের কর্মকর্তারা নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেন। গুয়াংডং প্রদেশের অন্য শহর ডংগুয়ানের কর্মকর্তারাও একই ঘোষণা দেন।

ভাইরাসটি দেশের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ারও প্রমাণ রয়েছে, যার ফলে অনুমান করা হচ্ছে যে, আরও লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে।

চীনের তথাকথিত “শূন্য কোভিড” নীতি, যা দেশের সমগ্র অঞ্চলের কঠোর লকডাউনের ওপর নির্ভরশীল ছিল, এখনো পর্যন্ত দেশটিকে এমন সংক্রমণ থেকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ রেখেছিল। অনেক পশ্চিমা দেশও যেটা থেকে রক্ষা পায়নি। যাইহোক, ভাইরাসটির অত্যন্ত সংক্রামক ওমিক্রন ধরনটি এখন চীনে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশের লকডাউন কৌশল এটিকে কতটা মোকাবিলা করতে পারবে তা দেখার বিষয়।

জটিল সূত্র

চীনের ভ্যাকসিন প্রদানের বর্তমান অবস্থার সাথে ভাইরাসের ওমিক্রন ধরণের বর্ধিত সংক্রমণযোগ্যতা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে এই তরঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে বেগ পেতে হবে।

এর মধ্যে হংকংকে সম্ভাব্য সতর্কতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। হংকং ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের মূল ভূখণ্ডের পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছিল এবং শহরটিতে রবিবার পর্যন্ত, প্রতি মিলিয়নে সপ্তাহ প্রতি ৩৮ জন মৃত্যবরণ করেছেন। ফিনানসিয়াল টাইমসের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে এটি মহামারীর যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো দেশে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ হার।

বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা

মহামারীর প্রথম দিকে, দেশের বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে লকডাউনের কারণে প্রধান বন্দরগুলো ব্যাপক সরবরাহ সমস্যা এবং পণ্য পরিবহনে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশ্লেষকেরা বলেছেন যে চীন যদি প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতি আরও একই রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

ইতিমধ্যে এই সপ্তাহে, ফক্সকন এবং ইউনিমিক্রন টেকনোলজি করপোরেশন, দুই প্রতিষ্ঠানই অ্যাপলের প্রধান সরবরাহকারী, ঘোষণা করেছে যে, তারা শেনজেনে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। জিলিন গাড়ি তৈরির একটি প্রধান কেন্দ্র। টয়োটা বলেছে যে, তারা সেখানে কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। সেখানে একটি চীনা সংস্থা এফএডব্লিউ গ্রুপের সঙ্গে টয়োটার একটি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে। ভক্সওয়াগনও সেখানে উৎপাদন স্থগিত করেছে।

একটি অঞ্চলভিত্তিক পদ্ধতি

আশা করা হচ্ছে, দেশব্যাপী লকডাউন বাস্তবায়নের পরিবর্তে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে চীন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক প্রভাব এড়াতে পারবে। অতীতে, তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত লকডাউন এবং পরীক্ষা চালানোর পরে, বেশ কয়েকটি শহর সফলভাবে পুনরায় চালু করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র-চায়না বিজনেস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডগ ব্যারি একটি ইমেলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, “উদ্বেগের বিষয় হলো কারখানাগুলোর সর্বব্যাপী এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্ধের ফলে আইফোন থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের বাহারি পণ্য সব কিছুর সরবরাহে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।” “চীনের কর্মকর্তারা বিদেশি মালিকানাধীন উৎপাদক এবং ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন। তারা একটি অঞ্চলভিত্তিক, ক্রমাঙ্কিত পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। শেনজেনে কারখানাগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে এবং তারপরে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।”

XS
SM
MD
LG