চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, রবিবার (১৩ মার্চ) দেশটিতে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জনের কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশটি দুই বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই সংক্রমণপ্রবণ এলাকাগুলোতে (hotspots) লকডাউন বাধ্যতামূলক করেছে।
দেশব্যাপী সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে কর্তৃপক্ষ সাংহাইতে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে এবং উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি শহরে লকডাউন জারি করেছে। প্রায় ১৯টি প্রদেশ কোভিডের ওমিক্রন এবং ডেলটা ধরণ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।
জিলিন শহরে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আশেপাশের শত শত এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা রবিবার ঘোষণা করেছেন। এ সময় উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী প্রায় ৭ লাখ বাসিন্দার ইয়ানজি শহরটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চীনে প্রথম ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ভাইরাসটি যখন গণহারে ছড়িয়ে পড়ে, চীন তখন দ্রুত লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং গণপরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসটির বিস্তার রোধ করে কঠোর “শূন্য-কোভিড” নীতি ধরে রাখে।
কিন্তু দ্রুত সংক্রমিত ওমিক্রন ধরণের বিস্তার এবং উপসর্গবিহীন রোগী বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি সার্বিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে যেটি “শূন্য কোভিড নীতি” ব্যাহত করেছে।
জিলিন প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তা ঝাং ইয়ান রবিবার স্বীকার করেছেন যে, ভাইরাস মোকাবিলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রয়াসের অভাব ছিল।
নিকটবর্তী শহর চাংচুনে–যেখানে প্রায় নয় মিলিয়ন মানুষের বসবাস-সেখানে শুক্রবার লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি ঘোষণা অনুসারে, জিলিন প্রদেশের সিপিং এবং দুনহুয়ার ছোট শহরগুলোতে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার লকডাউন দেওয়া হয়।
ভাইরাস দমনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ও্রপর রাজনৈতিক চাপের ইঙ্গিত হিসেবে জিলিনের মেয়র এবং চ্যাংচুন স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধানকে শনিবার বরখাস্ত করা হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
শূন্য কোভিড?
তবে কঠোর পদ্ধতির কারণে নাকাল চীনে কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য নমনীয় এবং আরও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, কঠোর কোভিড বিধি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়, দেশের বিভিন্ন অংশে ডিসেম্বরের তুলনায় নমনীয় এবং লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে জিয়ান শহর এবং এর ১৩ মিলিয়ন অধিবাসীকে দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হয়েছিল।
চীনের বৃহত্তম শহর সাংহাইতে, কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ ঠেকাতে গণ কোয়ারান্টাইনের পরিবর্তে স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রেস্তোঁরা এবং মলগুলোতে অস্থায়ীভাবে লকডাউন ঘোষণা করেছে।
সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, তারা দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করবে।
গত সপ্তাহে, একজন শীর্ষ চীনা বিজ্ঞানি বলেন যে, চীনের উচিত, অন্য দেশে যেখানে ওমিক্রন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, সেই সব দেশের মতো ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করা।
তবে সরকার এটাও স্পষ্ট করেছে যে, গণলকডাউন একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনাধীন রয়েছে।