গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস এ মাসে ইউক্রেনের ওপর এক পার্লামেন্টের বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্কে তার বক্তব্যে ইউক্রেন সংঘাতে তার সরকার কোন পক্ষ নিচ্ছে তা সন্দেহাতীতভাবে স্পষ্ট ছিল।
“নিরপেক্ষ অবস্থান বলে কোনো কিছু নেই। হয় শান্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে আছেন অথবা তাদের বিরুদ্ধে আছেন”, তিনি ইউক্রেনে ওষুধ ও প্রাণঘাতী সহায়তার একটি চালান পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার পর আইন প্রণেতাদের বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে আমরা সবসময়ই ন্যায়ের সঙ্গে ছিলাম এবং এখনো আমরা তাই করছি”।
কিন্তু অনেক গ্রিক নাগরিকদের কাছে, রাশিয়ার সঙ্গে বহু শতাব্দীর অস্তিত্বগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কারণে যেকোনো এক পক্ষ বেছে নেওয়া ততটা সহজ নয়।
“গ্রিক জনমতে রাশিয়াপ্রেমের কিছু নির্ণায়ক আছে, সেগুলো হলো ইতিহাস, অর্থোডক্সির ওপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ সংস্কৃতি এবং পশ্চিমাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন অবিশ্বাস থেকে সৃষ্ট পারস্পরিক বন্ধুত্ব”, মেসিডোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বলকান, স্লাভিক এবং ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের অধ্যাপক নিকোস মারানজিডিস বলেন।
ফেব্রুয়ারিতে হামলা-পরবর্তী একটি জরিপে দেখা যায়, ২০ শতাংশ গ্রিক রাশিয়ার “ঘনিষ্ঠ” এবং ৪৫ শতাংশ ইউক্রেনকে সমর্থন করে।
মাত্র আট শতাংশ বলেছেন যে, তারা রাশিয়ান পণ্য বয়কট করবেন এবং দুই শতাংশ বলেছেন যে, তারা রুশদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন না।
প্রায় ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কার্যকলাপকে নিন্দা জানালেও ৬০ শতাংশের বেশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন, কাপা গবেষণা জরিপে প্রকাশ পেয়েছে।
পুতিন “একজন মহান নেতা”
“একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রয়েছে, যারা একেবারে তুচ্ছও নন, তারা পুতিনকে ইতিবাচক চোখে দেখেন”, মারানজিদিস বলেন।
১৮ শতাব্দী থেকে গ্রিকরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। অর্থোডক্স মিত্র এই রাষ্ট্রকে ঐতিহাসিকভাবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাকারী হিসেবে দেখা হয়।
১৮২৭ সালে রাশিয়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে নাভারিনোর নৌযুদ্ধে যোগ দেয়, যা কার্যকরভাবে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে গ্রিসের স্বাধীনতা এনে দেয়।
জার্মানি এবং অন্য ইইউ রাষ্ট্রগুলোর আরোপিত আর্থিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক দশক ধরে গ্রিসে ব্যয়সংকোচন নীতির ফলে গ্রিকদের মধ্যে পশ্চিমা-বিরোধী মনোভাবের কথাও উল্লেখ করেন মারানজিদিস।
“হুমকি ও অপমান”
এথেন্সের রাশিয়ার দূতাবাস এই সপ্তাহে গ্রিসে তার নাগরিকদের প্রতি “হুমকি এবং অপমান” সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পুলিশকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোস ডেন্ডিয়াস ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের কয়েক দিন আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
কিন্তু ইউক্রেনে প্রায় এক ডজন উপজাতি গ্রিক নাগরিকের মৃত্যু দুই দেশের সম্পর্কের ওপর একটি আঘাত হেনেছে। প্রায় এক লাখ জনসংখ্যার এই উপজাতিটি ১৮ শতাব্দী থেকে ইউক্রেনে বসবাস করছে।
এথেন্স এই হত্যাকাণ্ডের জন্য রুশ বিমান হামলাকে দায়ী করেছে, কিন্তু মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি এথেন্সের রুশ দূতাবাস বলেছে যে, গ্রিক রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যমের “সচেতন হওয়া উচিত” এবং “রুশ-বিরোধী প্রচার” বন্ধ করা উচিত।
গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এই ধরনের ভাষাকে অকূটনৈতিক বলে নিন্দা করেছে এবং সরকারের মুখপাত্র ইয়ানিস ইকোনোমাউ মঙ্গলবার পাল্টা জবাব দিয়েছেন, “কেউ কোনোভাবেই আমাদের মধ্যে ভিন্নমত তৈরি করতে পারবে না।”
“গ্রিকরা ঐতিহাসিকভাবে বাইরের কারও কথায় প্রভাবিত হওয়ার মতো নির্বোধ বা ভুলোমনা নয়”, ইকোনোমাউ বলেছেন।
রুশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে, রুশপন্থী গ্রিক এবং ইউক্রেন সমর্থকেরা প্রতিদিন একে অপরকে গালিগালাজ করছে।
বেশির ভাগ লোকই রাশিয়ার আক্রমণ ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রিসে আশ্রয় নিয়েছেন।