সপ্তাহখানেক সমুদ্রে ভেসে থাকার পর রবিবার (৬ মার্চ) ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আচেহের একটি সৈকতে ১০০ জনেরও বেশি ক্ষুধার্ত ও শারীরিকভাবে দুর্বল রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
দলটি রবিবার ভোরে বিরুয়েন জেলার আলু বুয়া পাসি গ্রামের কাছে জাংকা সৈকতে পৌঁছায়। স্থানীয় উপজাতীয় জেলে সম্প্রদায়ের নেতা বদরুদ্দিন ইউনুস বলেন, গ্রামবাসীরা ১১৪ জন রোহিঙ্গাকে একটি কাঠের নৌকায় দেখে তাদের সৈকতে ভিড়তে সাহায্য করে এবং তারপর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।
ইউনুস বলেন, “দীর্ঘ এবং কঠিন সমুদ্রযাত্রার পরে ক্ষুধা ও পানিশূন্যতার কারণে তাদের খুব দুর্বল দেখাচ্ছিল”। দলটি কোথা থেকে এসেছে বা কোথায় যাচ্ছিল তা স্পষ্ট নয়, কারণ তাদের কেউই ইংরেজি বা মালয় বলতে পারে না।
ইউনুস বলেন, ৫৮ জন পুরুষ, ২১ জন নারী এবং ৩৫ জন শিশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং গ্রামবাসী, পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের সহায়তা করেছে। করোনভাইরাস টাস্ক ফোর্সসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, ইউনুস বলেন।
একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার সুত্র ধরে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম ২০১৭ সালে অগাস্টে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। ওই অভিযানে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা এবং হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শিবির ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে এই অঞ্চলের অন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদের সাধারণ গন্তব্যস্থল মুলত মুসলিম-অধ্যুষিত মালয়েশিয়া। পাচারকারীরা সেখানে শরণার্থীদের উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো মাত্রই গ্রেপ্তারের শিকার হন।
যদিও ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের ১৯৫১ শরণার্থী চুক্তির স্বাক্ষরকারী নয়, তবে ইউএনএইচসিআর বলেছে যে, ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের জারি করা প্রবিধান দেশটির সীমানায় দুর্দশাগ্রস্ত নৌকায় শরণার্থীদের চিকিৎসার জন্য এবং তাদের উদ্ধারে একটি জাতীয় আইনি কাঠামো প্রদান করে।
এই বিধানগুলো বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সম্প্রতি গত বছর ডিসেম্বরে ১০৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উত্তর আচেহ জেলার একটি উপকূলীয় শহর লোকসুমাওয়ে অভিমুখি বিরুয়েনের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।