বাংলাদেশে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল । কাজী হাবিবুল আউয়াল সর্বশেষ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
অপর চার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে তাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন।
নতুন এই কমিশন নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করেছে। নিচে তা তুলে ধরা হল-
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর- মহাসচিব, বিএনপি
"এই কমিশনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শুনতে পেলাম দায়িত্ব নেওয়ার এই কমিশনের সিইসি বিএনপিকে চায়ের আমন্ত্রণ দিতে চেয়েছেন। এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই রাখতে চাই না।
কে নতুন সিইসি হলেন বা কমিশনার কারা হলেন এটা নিয়ে আমাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এই বিষয়ে টোটালি কোনো আগ্রহ আমাদের নেই। এটা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। আমাদের মূল কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তা তো ২০১৪ সালের নির্বাচন ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবহ হয়, তাদের অনুগত হয়ে কাজ করে। তাই সরকারে আওয়ামী লীগ থাকলে সেখানে নির্বাচন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না-এটাই সত্যি। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি না। তাই এই কমিশন নিয়েও আর কিছু বলার আছে বলে মনে করি না।"
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
"বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই প্রথম আইন অনুসারে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে যে আইনের শাসন ও সুশাসনের পথে রয়েছে এবং সেই যাত্রা অব্যাহত করতে একটি ভালো নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।আমরা আশাকরি, এই কমিশনে যারা এসেছেন, তারা তাদের দক্ষতা ও নিষ্ঠা দিয়ে দেশের নির্বাচনকে একটি রোল মডেল হিসেবে উপস্থিত করতে অবদান রাখবে। এই কমিশন যেহেতু প্রথমবারের মতো আইনের দ্বারা গঠিত হয়েছে, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন দেখা দিবে না। সব রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কমিশন একটি সর্বজন গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করতে সফল হবে এই আশাবাদ রাখছি। বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা তাতে এই কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি।"
জিএম কাদের- চেয়ারম্যান- জাতীয় পার্টি
"যে আইনে নতুন কমিশন হয়েছে তা মূলত পুরাতন পদ্ধতিকে বহল রেখে আইনসম্মত করা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য সংবিধানের বিধান অনুসারে একটি আইন করা দরকার।
আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও সে অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। আমাদের প্রস্তাব ছিল সে কারণে এ বিষয়েও একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে আইনে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজে কোনো কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাবলী পালন না করিলে নির্বাচন কমিশন নিজেই যেন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এইরকম একটি আইন করা দরকার। যথোপযুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না। যতক্ষন পর্যন্ত না সে নির্বাচন কমিশনকে কর্তব্য সম্পাদনের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সহযোগিতা দেওয়া হয়। বর্তমান যে আইনটি পাশ হয়েছে তাতে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের যথাযথ ক্ষমতার বিষয়টি বিদ্যমান আইনের আওতায় আনা হয়নি। তাই কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।"
রাশেদ খান মেনন- সভাপতি, ওয়ার্কাস পার্টি
"আমরা সার্চ কমিটিকে বলেছিলাম, রাষ্টপতির কাছে যে দশ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে, তা যেন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তা করা হয়নি। করা হলে ভালো হতো। এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাঁচ জনের নাম প্রকাশ করেছেন। নতুন ইসি শপথ নিয়েছে। বিগত কমিশনের সময়ে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এটাই নতুন কমিশনের মূল চ্যালেঞ্জ। আশা করি নতুন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থা আবার সংগঠিত করার কাজে সত্যিকারভাবে কাজ করবে। আপাতত এটাই আশা।"
হাসানুল হক ইনু- সভাপতি, জাসদ
"বিদায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্বাচন নিয়ে কমতি-ঘাটতি ও অনাস্থা দেখা দিয়েছে তা দূর করাই বর্তমান কমিশনের চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।
একটি স্বচ্ছ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়াটাই জরুরি। যেহেতু এইবার আইনের মাধ্যমে কমিশন হয়েছে, তাই এটি এখন মীমাংসিত বিষয়। যারা অতীতে ভোটকে কলংকিত করতে নানা অপচেষ্টা করেছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মনমত কমিশন গড়তে কাজ করেছে, সেখান থেকে বের হয়ে আইনের মাধ্যমে এই কমিশন তৈরি হওয়া তাই নির্বাচনমুখী রাজনৈতিকদলসমূহের জন্যই মঙ্গল। এখন কমিশন নিজের কাজ দিয়ে প্রমাণ করবে সে কতোটা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কতোটা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারছে তার ওপর নির্ভও করবে এই কমিশনের ভাগ্য। তবে আমি আশাবাদি হতে চাই, এই কমিশনকে স্বাগত জানাই।"
খালেকুজ্জামান- কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বাসদ
"যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, আমরা মনে করি তাতে জনসাধারনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। এর আগেও যেভাবে কমিশন হয়েছিল এবারও গুণগত কোনো বদল ঘটে নাই। আইনের কথা বলা হলেও তা আগের প্রক্রিয়াই মূলত। দেশে এই নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে হয় না। নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো কাজই করতে পারবে না। আমরা তাই এই কমিশন নিয়ে আশাবাদি হওয়ার মতো কিছু দেখছি না।"