বাংলাদেশের বন্দরনগরী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে অমর একুশের বই মেলা শুরু হয়েছে ২০শে ফেব্রুয়ারি। এর আগে ঢাকায় জাতীয়ভাবে বইমেলা শুরু হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এরই ধারবাহিকতায় এবারও চট্টগ্রামে বইমেলা শুরু হয়েছে। তবে এবারের চট্টগ্রামের বইমেলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে "ইসলামি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে"।
চট্টগ্রাম বইমেলা বর্জনের ডাক
চট্টগ্রামের একুশে বই মেলায় ইসলামি বই বিক্রি নিয়ে বিতর্কের পর এই মেলা বর্জনের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন করে বইমেলা বর্জনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
প্রচারণায় বলা হচ্ছে, ইসলামি বইয়ের প্রকাশক বলে তাদের মেলায় স্টল বরাদ্দ করা হয়নি। ইসলামি বই প্রকাশ করে এমন কিছু প্রকাশনা সংস্থার লোকজন দাবি করছেন, তারা শুধু ইসলাম এবং সাহাবীদের নিয়ে বই প্রকাশ করেন, তারপরও মেলায় স্টল বরাদ্দ পাননি।
বইমেলার আয়োজকরা যা বলছেন
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "মেলায় ইসলামি বই প্রকাশের কোন বাধা নেই। তবে যে সব বই জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ বা উস্কানিমূলক কন্টেন্ট রয়েছে সেসব বই মেলা প্রাঙ্গণে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া পাইরেসি করে বই বিক্রির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।"
চট্টগ্রামের এবারের বই মেলার ১২১টি স্টল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবার ২২টি প্রকাশনা সংস্থার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এই ২২টির সবগুলোই যে ইসলামি বই প্রকাশ করছে তা নয়। বইমেলার বিধিমালা না মানায় আমারা অনেকের আবেদন বাতিল করেছি। যেমন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আবেদন এইবার আমরা রাখতে পারেনি। কারণ, তারা মেলার ফি দিতে রাজি হননি। এভাবে স্থান কম থাকায় সবাইকে সুযোগ দেওয়া যায়নি। এখন যারা অংশ নিতে পারছেন না, তারাই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
বিশিষ্টজনরা যা বলছেন
‘বাতিঘর’ বাংলাদেশের প্রথম সারির পুস্তক বিক্রয় ও প্রকাশনা সংস্থা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রয়েছে বাতিঘরের নিজস্ব আউটলেট। ঢাকার অমর একুশে বইমেলায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের একুশে বইমেলাতেও অংশ নিয়েছে বাতিঘর। চট্টগ্রামের বইমেলায় ‘ইসলামি বই নিষিদ্ধ’ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার দীপঙ্কর দাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমার জানা মতে, এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। মেলা উদ্বোধনের দিন চট্টগ্রামের মেয়র বলেছিলেন, ‘বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বই রাখা যাবে না। আমরা সেটুকুই জানি। এছাড়া মেলায় বই রাখা নিয়ে আর কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।”
চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বাংলার শিক্ষক মহি মুহাম্মদ। এই শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক বলেন, “চট্টগ্রামের বইমেলা বরাবরের মতোই হচ্ছে। যারা এসব বলছেন, তারা অপপ্রচারকারী। মেলায় আমি প্রতিদিনই যাচ্ছি। মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। এখানে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহি মাইজভাণ্ডারী ঘরানার বই যেমন আছে, আবার বায়তুশ শরফ এর বিভিন্ন বইও আছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনার ইসলাম বিষয়ক বইও রয়েছে। এক শ্রেণির লোক অযথা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
চলতি বছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী। চট্টগ্রামে বসবাসকারী এই সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বলেন, “চট্টগ্রামের বইমেলা নিয়ে যা হচ্ছে তা মিথ্যার নামান্তর। প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘর থেকে কবি আল মাহমুদ এর লেখা ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহস সালাম’ অনেক বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর ‘যার যা ধর্ম’, ‘কোরানশরিফ সরল বঙ্গানুবাদ’ বইটিও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তাই ধর্ম বিষয়ক বই যে নিষিদ্ধ এই কথা সঠিক নয়।”