মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক উদ্যোগের অভাব ও অনিশ্চয়তায় কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অবস্থা ক্রমশই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। বেশ কয়েকটি অপরাধী গোষ্ঠী ও স্বার্থান্বেষী মহল শরণার্থী ক্যাম্পের পরিস্থিতি আরও খারাপ করার চেষ্টা করছে। এর ফলে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। এই অঞ্চলে ভূমি এবং জীবিকার সুযোগ না থাকায় মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে জাতিসংঘকে পাঠানো এক চিঠিতে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
গত ১৮ই নভেম্বর জেনেভাস্থ জাতিসংঘের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে তারা জানতে চান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত আগাম কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে ছিল কিনা।
গত ৩রা জানুয়ারি এক চিঠিতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জবাব দিয়েছে । এই চিঠিতে বলা হয়, মুহিবুল্লাহ হত্যার আগে সরকার কিছুই জানতো না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও জানতো না তাকে আগে কেউ হুমকি দিয়েছিল কিনা। হত্যার পরপরই একটি মামলা দায়ের করা হয়। সাথে সাথে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দ্রুত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে। এর সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ১২ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে চারজন নিজেদের অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মুহিবুল্লাহ'র পরিবারের সকল সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা ঘাতকের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। ক্যাম্প পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ২০২১-এর ২২শে অক্টোবর ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ১৬২৬ জন পুলিশ এবং ৪২৭ জন আনসার বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ক্যাম্প এলাকায় ৩টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছে।
নানাবিধ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক চাহিদা এবং মিয়ানমারে তাদের জন্মস্থানে ফেরত পাঠাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কিন্তু মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান ধীরে ধীরে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্যই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমনের পটভূমি ব্যাখ্যা করে চিঠিতে বলা হয়- সরকার এটা স্পষ্ট করতে চায় যে, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কারণে সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। আর এটা ছিল সম্পূর্ণ মানবিক কারণে। বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয়রত রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নয়। তারা মিয়ানমারের একটি জাতিগত সংখ্যালঘু। যারা বহু শতাব্দী ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে ও মিয়ানমারে তাদের একটি ধর্মীয় এবং ভাষাগত পরিচয় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘু ইস্যুতে জেনেভাস্থ জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারকে তাদের ম্যানডেট অনুযায়ী অর্থপূর্ণভাবে সমাধান করবে বলে চিঠিতে অনুরোধ জানায়।