আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন অং সান সুচি। হেগের আদালতে তিনি নিজেই মিয়ানমারের পক্ষে লড়বেন। অনেকটা নাটকীয়ভাবে বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে। বলেছেন, ওই মামলায় মিয়ানমার থেকে যে আইনগত টিম থাকবে তার নেতৃত্বে থাকবেন তিনি। এই মামলার শুনানি হবে ১০ থেকে ১২ই ডিসেম্বর। গত ১১ই নভেম্বর মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে বিচার চেয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। হত্যাযজ্ঞের প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোন দেশের পক্ষে এই পদক্ষেপ নেয়া হলো। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ঘোষণায় বলা হয়েছে, এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ জাতীয় স্বার্থ রক্ষা। গাম্বিয়া গণহত্যার বিষয়ে যা উল্লেখ করেছে মিয়ানমারের ঘোষণায় তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং এতে বলা হয়েছে, মামলা করা হয়েছে রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পক্ষে। অং সান সুচি একই সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, তার দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দেবেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, এটা হয় স্ট্যান্টবাজি অথবা নতুন কোন কৌশল।
২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট থেকে দেশটির রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায় সেনাবাহিনী। আর এই নৃশংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলছে, জাতি নিধনের উদ্দেশ্যে এসব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো একই মত দিয়েছে। মামলা করার সময় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল আবু বাক্কার মারি তামবাদুল বলেছেন, এই মামলার মধ্য দিয়ে তারা মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি পরিস্কার বার্তা পাঠাতে চান। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান গত মাসে সতর্ক করেছেন, আবারো মিয়ানমারে গণহত্যা শুরু হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণান বলেছেন, রাখাইনে যে গণহত্যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন অং সান সুচি। তারা এই অবস্থাকে জরুরি কোন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেননি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও কোন পদক্ষেপ নেননি। স্মরণ করা যায়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। ওই আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার অনুমতি দিয়েছে প্রসিকিউটরদের। ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী