বাংলাদেশে ঢাকার চকবাজারে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮১ জন মারা গেছেন। বুধবার রাত ১০টারও কিছু পরে ব্যস্ত নগরীর সব কিছু চলছিল ছক অনুযায়ী। চুড়িহাট্টার রাস্তায় তখন প্রচন্ড জ্যাম। রিকশা আর প্রাইভেট কারে রাস্তা আটকে আছে। হঠাৎ বিকট শব্দে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। তখন শুধু আগুন আর আগুন। পাশের বিল্ডিংয়ে রাসায়নিক কারখানায় ছড়িয়ে পড়লো। এরপর কে কোথায় কেউ জানে না।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরানো ঢাকারই নিমতলীতে কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামে লাগা আগুনে কমপক্ষে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার ৯ বছরের মাথায় এসে পুরানো ঢাকারই আরেক এলাকা চকবাজারের আগুনে বুধবার রাতে অসংখ্য মানুষের নিহত হওয়ার পেছনে রয়েছে প্রধানত ওই একই কারণ-আগুনে রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোরণ। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক কোনো দৈব দুর্বিপাক বা সামান্য দুর্ঘটনা নয়, এটি মানুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। তারা এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন।
এই অগ্নিকান্ডের কারণ সম্পর্কে ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনরত ফায়ার সার্ভিসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনা সম্পর্কে কথা বললেন।
২০১০ সালের নিমতলীর ঘটনার পরে পুরনো ঢাকায় থাকা ৮ শতাধিক রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা কেরানিগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এবারে আবার সরকারি কর্তাব্যক্তিরা নড়েচড়ে উঠেছেন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানা পুরনো ঢাকা থেকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বললেন একই কথা।
তবে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীত থেকে শিক্ষা না নেয়ার কারণেই এই মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ভয়েস অব আমেরিকাকে এমনটিই বললেন।
নাগরিক অধিকার বিশেষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যরিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া কর্তৃপক্ষীয় অবহেলাকে দায়ী করেছেন।
নগরপরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, পুরনো ঢাকাকে পুনর্গঠন করার কথা।
সাধারণত মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ সবাই কামনা করছেন, এবারের কর্তৃপক্ষীয় ঘোষণা যেন কথার কথাই না থাকে। ঘোষণা অনুযায়ী রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা যেন পুরনো ঢাকা থেকে অবিলম্বে উচ্ছেদ করা হয়। আবার যেন নিমতলী আর চকবাজারের মতো প্রাণঘাতী ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ঢাকা থেকে আমীর খসরু'র রিপোর্ট।