অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভাসানচরের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা দিতে যাচ্ছে জাতিসংঘ 


ভাসান চর দ্বীপে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ -পূর্ব বন্দর শহর চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
ভাসান চর দ্বীপে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ -পূর্ব বন্দর শহর চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।

বাংলাদেশের কক্সবাজার শরনার্থী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। নোয়াখালি জেলার ভাসানচরে কাজ করতে শনিবার বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ‘এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। সমাঝোতা সইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সমঝোতা সইয়ের মধ্য দিয়ে শুধু জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাই নয়, বরং সমালোচিত ভাসানচর প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলো বাংলাদেশ সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন জানান, বাংলাদেশের পক্ষে তিনি এবং ইউএনএইচসিআর হেডসহ উভয়পক্ষের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার নিজের কার্যালয়ে এমওইউ টি সই করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, নির্বাচনের সুযোগসহ জাতিসংঘের দেয়া বিভিন্ন শর্ত এতোদিন ধরে বিচার-বিবেচনা করে আসছিলো সরকার। এ সব শর্তের মধ্যে কিছু শর্ত রয়েছে যেগুলো আংশিক মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। আর কিছু শর্ত পুরোপুরি নাকচ করা হয়েছে।

গতবছরের ডিসেম্বর থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি স্বত্ত্বেও কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ধাপে ধাপে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয় সরকার। প্রথম ধাপে স্বেচ্ছায় যেতে চাওয়া এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের উপর চাপ কমাতে এবং রোহিঙ্গাদের আরো বেশি নিরাপত্তা দিতে ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর মোহনায় ভাসানচরে আশ্রায়ণ প্রকল্প গড়ে তোলে সরকার। প্রকল্পটিতে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা, পাকা দালান-ঘরসহ দৈনন্দিন জীবনের সব আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা শঙ্কার কথা বলে ভাসানচরের বিরোধীতা করে আসছিলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় পর্যায়ের কিছু এনজিও সংস্থাকে সাথে নিয়ে সরকার নিজেই ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাসহ সহ সব ধরনের দেখভাল শুরু করে।

দ্বীপটিতে রোহিঙ্গারা বসবাস শুরুর পর তাদের মুখেই এর আধুনিক সুযোগ সুবিধার কথা শুনে অবস্থান পাল্টাতে থাকে ওইসব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত ১৭ই মার্চ তিন দিনের সফরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে রোহিঙ্গাদের সাথে সরাসরি কথা বলেন তারা। এর প্রায় মাসখানেক পর ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান তারা। অর্থাৎ ভাসানচরে মানবিক সহায়তায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সাড়া দেয় সংস্থাটি। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচর দেখতে যায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা, ওআইসি। সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ১০ জন বিদেশি রাষ্ট্রদূতও। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ।

XS
SM
MD
LG