গত কয়েক বছরের তুলনায় করোনাকালে ডিভোর্সের আবেদন বেড়েছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক সময় পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবও বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উল্লেখ করা যায় যে, রাজধানীর বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনগুলো জমা পড়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে।
ঢাকার বাইরেও সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো মীমাংসা না হলে ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ডিভোর্স দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা।
চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে তালাকের আবেদন করেছেন ৫ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে আবেদন ২ হাজার ৮২৫টি, ডিএসসিসিতে ২ হাজার ৬৬২টি। এই হিসেবে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে দিনে ৩৭টি তালাকের আবেদন পড়ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা শহরে তালাকের আবেদন জমা পড়েছে ৬ হাজার ৩৪৫। এর মধ্যে স্ত্রীদের আবেদন ৪ হাজার ৪২৮টি। স্বামীদের আবেদন ১ হাজার ৯১৭টি।
২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে ৪১৪৯টি। এর আগের বছর ২০১৯ সালে বছরজুড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন ছিল ৪৫৫০টি। হিসাব করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে আবেদন বেড়েছে। একই সময় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন হয়েছে অনেক বেশি। ২০১৯ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন ছিল ২৯১টি। অথচ ২০২০ সালে এ আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার। ২০২১ সালেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং জেলা শহরে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন অন্য বছরের তুলনায় বেশি জমা পড়েছে।
সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা জানান, ডিভোর্সের আবেদনকারীদের মধ্যে নারীরাই বেশি ডিভোর্স দিচ্ছেন। তারা নিজেরাই বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন নিয়ে করপোরেশনে যান। এর মাঝে চাকরিজীবী স্বাবলম্বী নারীরাই বেশি এগিয়ে।
গড়ে ৭০ শতাংশ আবেদন কেন নারীদের কাছ থেকে আসছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক নির্যাতন বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে একপর্যায়ে তারা এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তালাকের আবেদন করছেন। কারণ, এখন শুধু শহর নয় সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরাও দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। নারী শিক্ষার হারও বেড়েছে। মুখ বুজে সহ্য করার দিনগুলোও ফুরিয়ে এসেছে। নারীরা প্রতিবাদী হচ্ছে। নারীরা সমাজের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরছে। সমাজ জীবনে সংসারটা সমঅধিকার ও সমান মর্যাদার স্থান।
কীভাবে ডিভোর্স কমানো যায় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করতে হবে। তাহলে উভয়ের মাঝে সমঝোতা তৈরি হবে, যা সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।