অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপিত


বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান মানুষজন। ডিসেম্বর ১৬, ২০২১। (ছবি- মুনির-উজ-জামান/ এএফপি)
বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান মানুষজন। ডিসেম্বর ১৬, ২০২১। (ছবি- মুনির-উজ-জামান/ এএফপি)

বাংলাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে একই সঙ্গে।

সকাল ৬টা ২৮ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। পরে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, মতিয়া চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। এরপর সাভার স্মৃতিসৌধ খুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য। মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।

বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গাউন্ডে এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ। এতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি। প্যারেডে তিন বাহিনী অংশ নেয়। প্যারেড আয়োজনে সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পরে খোলা জিপে রাষ্ট্রপতি প্যারেড পরিদর্শন করেন। এবার বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি রাশিয়া, ভারত, ভুটান,যুক্তরাষ্ট্র প্যারেডে অংশ নেয়।

বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আজ ছিল প্রথম দিন। মুজিববর্ষ উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিচালনা করেন সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে সারা দেশ থেকে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে মানুষ। শেখ হাসিনা শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীকে অঙ্গীকার করান শপথে। বিকাল পৌনে ৫টায় এই শপথ পড়ান তিনি।

শপথবাক্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ বিজয় দিবসে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না- দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়ে়াগ করব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়ি়ক চেতনার সোনার বাংলা গডে় তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন"।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথিকে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধাস্মারক প্রদান করা হয়।

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ দুই দেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছরের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার আহবান জানান।

বিজয় দিবসের দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

বিজয় দিবসে ঢাকাজুড়ে সকাল থেকেই ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।

XS
SM
MD
LG