অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমি পছন্দ করছি"- নাজমুল হক প্রধান


নাজমুল হক প্রধান
নাজমুল হক প্রধান

৭ জানুয়ারী ২০২৪-এ হয়ে গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে ৩০০ আসনের ঘোষিত ২৯৮ টির মধ্যে ২২২ টিতে জিতে, দুই তৃতীয়াংশের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

অংশ নেয়া ২৮ টির মধ্যে ২৪ টি থেকে একজনও না জেতা ও তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবার জামানত হারানো এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১ ও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যান পার্টি থেকে জিতেছেন ১ জন করে।

এদের মধ্যে, জাতীয় পার্টির ১১ জনই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে, যেসব জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সেসব নির্বাচনী এলাকায়।

জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়ে, আর কল্যান পার্টিও তার আসনটি জিতেছে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে।

বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।

ফলে এ নির্বাচন শেষে দেশে একটি একদলীয় "গণতন্ত্রের" উত্থান হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।

বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের বর্জন করা এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দেয়া দেয়া তথ্য মতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। অফিসিয়াল এই ফিগার-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ এর পর এটিই বাংলাদেশে হওয়া সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদিও বিএনপি সহ, দেশি বিদেশী অনেকেই এই নির্বাচনকে "ডামি নির্বাচন " বলে দাবি করেছেন।

কেমন হলো এবারের নির্বাচন? কেমন ছিল এতে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা? এ নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে আমরা কথা বলেছি নির্বাচনে জয়ী, পরাজিত, বর্জনকারী, সব পক্ষের রাজনীতিবিদদের সাথে। কথা বলেছি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও। নির্বাচনে মিডিয়ার ভূমিকাকে তারা কিভাবে দেখছেন? কিভাবে নিচ্ছেন নির্বাচনের ব্যাপারে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের প্রতিক্রিয়া? এসব নিয়েও আমরা কথা বলেছি তাদের সাথে।

এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হাসিবুল হাসান।

সাক্ষাৎকার: নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক

ভয়েস অফ আমেরিকা: ভোট কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ হলো? এই চারটি ক্রাইটেরিয়াতে ১ থেকে ১০ স্কেলে এই নির্বাচনকে আপনি কত দেবেন?

নাজমুল হক প্রধান: আমি এই নির্বাচনকে কোনও মার্কই দেবো না। এটা কোনো ভোট নয়, ভোটের নামে একদলীয় সিলেকশন এটা।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এবারের নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাতে কি আপনি সন্তুষ্ট? ১ থেকে ১০ স্কেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কত পাবে?

নাজমুল হক প্রধান: আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের নরমাল যে দায়িত্ব, সেটা তারা পালন করেছে। কোনো স্থানে তাদের মারামারি ঠেকাতে দেখি নাই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে? ১ থেকে ১০ এর মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকাকে কত দিতে চান আপনি?

নাজমুল হক প্রধান: প্রশাসন সব জায়গায় সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে। দুইটার পর থেকে পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই সিল মারার ক্ষেত্রে মারাত্মক সিদ্ধহস্ত ছিল। না হলে আরও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিততো।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আসলে কত পার্সেন্ট ভোট পড়েছে বলে মনে করেন? আপনার এলাকায় কত পার্সেন্ট আসল আর কত পার্সেন্ট জাল ভোট পড়েছে বলে মনে হয়? নাকি এবারে জাল ভোট পড়েনি?

নাজমুল হক প্রধান: আমার কাছে তিনটা জায়গা থেকে ফোন এসেছিল। সবাই বলেছে, ভোট নাই তো। দুইটায় একজন ফোন করে বলে ভাই ৭৫টা ভোট পড়েছে, আরেক জায়গা থেকে ফোন দিছে ৬৫টি ভোট পড়েছে, আরেক জায়গায় ৮৫টি ভোট কাস্ট হয়েছে। এরপর হঠাৎ করে ভোট বেড়ে গেল। ভোটে মানুষের মারাত্মক অনিহা ছিল। জোর করে দেখাচ্ছে। সরকার প্রশাসন এক হয়ে গেলে যা হয়, তাই হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাল ভোট হয়েছে, শিশুরা ভোট দিয়েছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: নির্বাচনে দেশীয় মিডিয়ার ভূমিকাকে ১ থেকে ১০ স্কেলে কত দেবেন? সঠিক তথ্যের জন্য আপনি কাদের ওপর নির্ভর করেছেন? ক্রমানুসারে বলুন- নির্বাচন কমিশন, দেশি টিভি চ্যানেল, দেশি পত্রিকা, বিদেশী গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া।

নাজমুল হক প্রধান: দেশীয় মিডিয়ার ভূমিকায় ৩-৪ নম্বর দেওয়া যায়। পাশ। কিছু মিডিয়া কিছু সময়ের জন্য কখনো কখনো কথা বলে না, এমন নয়। কিন্তু এটাকে পাশ মার্ক দেওয়া যায়। আমি আজকাল তথ্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করি। বিভিন্ন ফর্মে এগজাক্ট খবরটা পাওয়া যাচ্ছে। তারা গুছিয়ে বলতে পারে না, কিন্তু নিলে পাওয়া যায় কোথায় কি হচ্ছে। বায়াসড না, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণ এগজাক্ট খবরটা পাওয়া যায়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ভোট বর্জনের ডাক কতটা সফল? ১ থেকে ১০ স্কেলে কত পাবে?

নাজমুল হক প্রধান: ভোটের প্রতি মানুষের বিন্দুমাত্র কোনও আগ্রহ ছিল না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতা আর নির্বাচন বর্জন কেন্দ্রিক সহিংসতার মধ্যে কোনটি বেশি হয়েছে ?

নাজমুল হক প্রধান: নির্বাচনোত্তর সহিংসতা এখন শুরু হবে। যেহেতু এটা একদলীয় সিলেকশন যতটুকু নিজেদের মধ্যে ভোট হয়েছে, এরজন্য যে রেশারেশি তৈরী হয়েছে, এর প্রভাব এখন শুরু হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এ নির্বাচনের ফলে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট কাটার সম্ভাবনা কতটুকু? ১ থেকে ১০ স্কেলে কত?

নাজমুল হক প্রধান: এই নির্বাচন বৃহত্তম সংকটের জন্ম দিল। এক দলীয় শাসনে ভোটের নামে এমন নাটক পৃথিবীর আর কোথাও হয় কিনা আমি জানি না। ফলে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণ তো হবেই না, বরং এটার খেসারত জাতিকে দিতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি কি মনে করেন এই রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপে বসা দরকার?

নাজমুল হক প্রধান: ফোরটি সেভেনের পর থেকে আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের ধারাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি দেখেই বাংলাদেশ হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীনের পরেও আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের ধারা তৈরী করতে সফল হতে পারিনি। যারা নিজেদের এই দেশের জনক মনে করে সেই আওয়ামী লীগকেই এই দায় নিতে হবে। এখনো তারা যদি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের ধারাটা সৃষ্টি না করে তার দায় তাদেরই নিতে হবে। সৃষ্টির দায় যেমন তারা নিচ্ছে, ধ্বংসের দায়ও তাদের নিতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: দুইদলের মধ্যে সংলাপ হলে একটি সমাধানে আসার সম্ভাবনা কতটুকু? ১ থেকে ১০ স্কেলে?

নাজমুল হক প্রধান: অবশ্যই সম্ভাবনা আছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আন্দোলনের মাধ্যমে বিরোধীদল কি নতুন সংসদ ভাঙতে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে? ১ থেকে ১০ স্কেলে কতটুকু চান্স দেখেন?

নাজমুল হক প্রধান: সরকার ১৫ বছরের শাসনে এতো বেশি দলীয়করণ করেছে, একদম পিয়ন পর্যন্ত। ফলে এখানে ফলে আন্দোলন করার তো কোনও স্কোপ নাই। আমরাও তো এরশাদের আমলে, জিয়াউর রহমানের আমলে জেল খেটেছি, কিন্তু এখন তো ধারাটাই ভিন্ন। এবার এ টু জেড, যেভাবে মামলা করে সাজা দেওয়া হচ্ছে, তারা হয়তো মনে করছে, বিএনপি বা বিরোধীদের শেষ করে দেবো, কিন্তু এটা আসলে দুরাশা হবে। কারণ নির্যাতন করে কখনোই শেষ করা যায় না বরং নির্যাতনকারীরাই শেষ হয়ে যায়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ৭ জানুয়ারীতে হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

নাজমুল হক প্রধান: তিনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমি পছন্দ করছি। তারা জনগণের সঙ্গেই আছে, এটাই আমার ভালো লাগছে। তারা বায়াসড না। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।

XS
SM
MD
LG