অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আব্দুল মোমেন: ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিবৃতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই’


ঢাকায় কূটনীতিকদের সঙ্গে 'মিট অ্যান্ড গ্রিট' অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ৯ জানুয়ারি, ২০২৪।
ঢাকায় কূটনীতিকদের সঙ্গে 'মিট অ্যান্ড গ্রিট' অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ৯ জানুয়ারি, ২০২৪।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বক্তব্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই; কারণ তারা জনগণের রায়কে সম্মান করে।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় 'মিট অ্যান্ড গ্রিট' অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমনে। পরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানটিটস্কি উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস এবং বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অহিংস পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটাই যথেষ্ট।

বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দেশের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এতে খুবই খুশি।”

“দেশের জনগণ আবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। জনগণ তাদের রায় দিয়েছে, আমাদের আর কিছুর প্রয়োজন নেই;” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এই অনুষ্ঠানকে একটি স্ট্যান্ডার্ড ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ হিসাবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “আমরা আরো ভালো অংশীদারিত্ব, আলো ভালো সহযোগিতা এবং আরো ভালো সমন্বয় দেখার জন্য আগ্রহী। এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য।”

সহযোগিতা ও অবদানের কারণে বাংলাদেশ অনেক অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধারাবাহিকতার প্রতীক; যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে অবদান রাখতে পারে।

“বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও চরমপন্থা নির্মূলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; জানায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

মোমেনের বক্তব্যের পর কূটনীতিকদের মধ্যে একটি ব্রিফিং নোট বিতরণ করা হয়। নোটে বলা হয়, “নতুন সরকারের উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বৃহত্তর আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সংহতকরণ ও যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় অভিন্ন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা আরো জোরদার করতে প্রস্তুত হবে।”

“আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সফল হবে, যা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম গর্ববোধ করবে;” উল্লেখ করা হয় ব্রিফিং নোটে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি

অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের মতো যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, জানুয়ারির ৭ তারিখে হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি, বলেছেন যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সেইসাথে, সবগুলো দল এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে।

সোমবার, ৮ জানুয়ারি দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতন্ত্রের আকাঙ্খা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।" ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে উল্লেখ করে মিলার বলেন, "এই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করা ও নির্বাচনের দিন ঘটা অনিয়মের রিপোর্টগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ জারি থাকবে।"

নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের আগের কয়েকমাসে ঘটা সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেন, "সহিংসতার এ ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা ও এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি। সেই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা পরিহার করার জন্যও আমরা আহ্বান জানাই।"

মিলার আরও বলেন, "সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ভিশন বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো -প্যাসিফিক, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের প্রতি সমর্থন ও দু'দেশের নাগরিকদের সঙ্গে নাগরিকদের ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গভীর করা।"

ব্রিটেনের বিবৃতি

ব্রিটেন সোমবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সময় সংঘটিত "ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার ঘটনার" নিন্দা জানিয়েছে এবং বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, "গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এই মানদণ্ডগুলো ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।"

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, "আমরা ভোটের আগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে উদ্বিগ্ন।"

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে রোববারের সাধারণ নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হওয়ার একদিন পর ব্রিটেন এই বিবৃতি দিলো।

XS
SM
MD
LG