অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগের মার্কা যেভাবে হলো নৌকা


Bangladesh Election
Bangladesh Election

ভালোবাসা, ভালো আশ্বাস আর ভালো কথায় ভোটারদের কাছে টানার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে চলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারযুদ্ধ।

প্রার্থীরা ছুটে গেছেন ভোটারদের দুয়ারে। কিন্তু ভোটাররা কি প্রার্থীকে দেখেন? না দলীয় প্রতীক দেখেন।

বাংলাদেশে ভোটের যুদ্ধের অনেকটাই মূলত প্রতীককে ঘিরে।

আওয়ামী লীগের নৌকা, বিএনপির ধানের শীষ ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে।

কিভাবে এল এই নৌকা?

আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়।

শরিক হিসেবে যুক্তফ্রন্টে আরও ছিল মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি, বামপন্থী গণতন্ত্রী দলের নেতা ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলী সিলেটী।

যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমে ভোটের লড়াই শুরু করে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে।

সেই সময় যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

১৯৫৪ সালের ৮ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা ২২৩টি আসনে বিজয়ী হন।

এর মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, ৪৮টি পেয়েছিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি।

নেজামী ইসলাম পার্টি জয়ী হয় ২২টি আসনে। এ ছাড়া গণতন্ত্রী দল ১৩টি এবং খেলাফত-ই-রাব্বানী দুটি আসনে জয়ী হয়।

যুক্তফ্রন্ট ভেঙে গেলে নৌকা প্রতীক পায় আওয়ামী লীগ।

১৯৫৭ সালে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ এবং নৌকা প্রতীকও পায় দলটি।

কিন্তু এ প্রতীকে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগকে অপেক্ষা করতে হয় আরও ১৩ বছর।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জানুয়ারি ১৪, ১৯৭১। (ছবি- মাইকেল লরেন্ট/ এপি)
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জানুয়ারি ১৪, ১৯৭১। (ছবি- মাইকেল লরেন্ট/ এপি)

পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়। সেই থেকেই নৌকায় চড়ে নির্বাচন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু নৌকা বেছে নেয়ার কারণ কী?

বাংলার সবুজ শ্যামল প্রকৃতির দিকে তাকালে সে বিষয়ে খুব সহজেই ধারনা পাওয়া যায়। এখানে আর একটি ছোট্ট ইতিহাস বুঝতে সহায়ক হতে পারে।

১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষে গোপালগঞ্জে সাহায্য আনার জন্য মুসলিম লীগের জাতীয় নেতাদের নিয়ে নিজের এলাকায় একটা সম্মেলনের আয়োজন করেন তরুণ শেখ মুজিব।

বড় বড় নৌকার বাদাম দিয়ে সম্মেলনের প্যান্ডেল করেছিলেন তিনি।

নৌকার বাদাম দিয়ে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল হতে পারে, তরুন মুজিবের নতুন এ উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল নেতাদের মাঝে।

এরপর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জাতেই ব্যবহার করা হয়েছে নৌকার বাদাম।

আলাপের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, প্রবীন রাজনীতিক আমির হোসেন আমু নিজ এলাকা ঝালকাঠির উদাহরন দিয়ে বলেন, "তৎকালীন সময়ে আসলে বাংলায় নদীপথ ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না। নদীতে নৌকা মানেই পালতোলা নৌকা। এখন তো কত রাস্তা হয়েছে, করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। উত্তরবঙ্গ কিংবা দক্ষিনবঙ্গ সবজায়গাতেই নৌকায় ছিল ভরসা।"

তখন নৌকার বিকল্প কোন মার্কার প্রস্তাব এসেছিল কি না আওয়ামী লীগের সামনে জানতে চাইলে আমির হোসেন আমু জানান, "তখন অন্য কোন মার্কার প্রস্তাব আসে নি। এবং কোন আলোচনাও তখন হয় নি, একবারেই প্রতীক হিসেবে ঠিক হয়েছিল নৌকা। সেই থেকেই জনগনের আস্থা আর ভরসা হয়েছে নৌকা আওয়ামী লীগের অনন্য মার্কা।"

নদী আর নৌকা নিয়েই হয়েছে কত গান, কবিতা, চলচ্চিত্র এবং নানা সৃষ্টি। এই প্রতীকটা তাই ঐতিহ্যগতভাবে এই অঞ্চলের মানুষের মননে জড়িয়ে আছে।

নেতৃত্বের দিকে তাকালেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা মিলবে। কেননা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন, মাওলানা ভাসানী— তারা কিন্তু গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন, হয়েছেন বিশ্বনেতা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের হাল ধরেছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। টানা তিনবারে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর চতুর্থবার স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিতে চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নৌকা প্রতীকে দল হিসেবে আওয়ামীলীগের জয় এবারও হবে বলেই মনে করছে দলটি।

XS
SM
MD
LG