অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে"- রাখাল রাহা


রাখাল রাহা
রাখাল রাহা

আগামী ৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র নেতৃত্বে ৩৬ টি রাজনৈতিক দল ও ইসলামী আন্দোলন সহ বেশ কিছু ইসলামপন্থী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে।

অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা যায় নির্বাচন বর্জনকারী এই দলগুলোর সম্মিলিত ভোট চল্লিশ শতাংশের কিছু বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট দলগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দু'টি দলের একটি, বিএনপি'র অংশগ্রহণ ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে তা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্ন উঠেছে।

পাশাপাশি বিএনপি ও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে তা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতো কিনা এই প্রশ্নটিও জোরালোভাবে নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়ে কী ভাবছেন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তা নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা কথা বলেছে সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সাথে।

এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন গোলাম সামদানী।

সাক্ষাৎকারঃ বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক রাখাল রাহা

ভয়েস অফ আমেরিকা: স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোয়ন বৈধ হবার জন্য ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর জমা দেয়ার যে বিধান আছে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায্য?

রাখাল রাহা: এটা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত না এবং আমাদের সংবিধানের সাথে এটা সাংঘর্ষিক নিয়ম। এই বিধানটা তৈরি করেছিলো ওয়ান ইলেভেন নামক সামরিক সরকার। তারপরে যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তারাও এটা বাতিল করে নাই। কারণ তারা দেখেছে, এই নিয়মের ফলে তাদের রাজনীতিতে সুবিধা হয়। এই ধরনের নিয়ম একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ হলো যে, আমি কাকে ভোট দিচ্ছি বা কাকে পছন্দ করি এটাতো আমি উন্মুক্ত বা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারি না। এই বিধানের ফলে সেটা আমাকে প্রকাশ্যে বলতে হচ্ছে। এই আইনের ফলে ক্ষমতাসীন দল সুবিধা নিচ্ছে। সেজন্য তারা এটা বাতিল করছে না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে কি অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হতো?

রাখাল রাহা: আমাদের ইতিহাস কিন্তু সেটাই বলে। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সারা দুনিয়াই সেগুলো সুষ্ঠু হয়েছে ( মনে করে বলে) আমরা শুনে থাকি। আমরা নিজেরাও সেটা মনে করি। সুতরাং নি:সন্দেহে বলা যায় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে বর্তমানে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা আরও অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতো।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বিএনপি ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে?

রাখাল রাহা: এই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ যে কোন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি উভয় দলই ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে থাকে। আর এসব নির্বাচনে মোট ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট কাষ্ট হয়ে থাকে। সুতরাং এই বিচারে বলা যায় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তা একেবারেই অংশ গ্রহণমুলক নির্বাচন বলা যাবে না।

দেখা যাচ্ছে যে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারপরেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটা কম বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং আমরা ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতার মধ্যে আছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি না যে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়া এটা আলাদা বিষয়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কতদিন টিকে থাকবে? তিনমাস, ছ'মাস, এক বছর, পূর্ণমেয়াদ?

রাখাল রাহা : ২০১৪ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে যে নির্বাচনগুলো হয়ে আসছে তার কোনটাই যেহেতু ফেয়ার নির্বাচন না। সুতরাং আমরা বলতে পারি সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত না। তারপরেও তারা পূর্ণমেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়ে আছে এবং দাপটের সহিত সরকার পরিচালনা করছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি না, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তারা পূর্ণ মেয়াদে থাকতে পারবে কি পারবে না। তবে তা জাতীয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজৈনীতির ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে। এই বাইরে অনুমান করার মতো কোন ডাটা আমাদের কাছে নাই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি এবার ভোট দিতে যাবেন?

রাখাল রাহা : এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাব কিনা এটা অনেকটা ব্যক্তিগত প্রশ্নের মতো হয়। তবে এটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন হলেও আমি উত্তর দিতে চাই, সেটা হলো এই নির্বাচনে আমি ভোট দিতে যাব না।

XS
SM
MD
LG